করুণাময় সিংহ, মালদা: ভুয়ো মেমো নম্বর দিয়ে টাকা বরাদ্দ। মালদায় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের প্রকল্পে ৮ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। জেলাশাসকের নির্দেশে দায়ের করা হয়েছে FIR। ঘটনায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। যদিও অভিযুক্তদের পাশে দল থাকবে না বলে জানিয়েছে তৃণমূল। 


এক্কেবারে রাজ্য সরকারের লেটার হেডে ছাপানো অনুমোদনপত্র! নীচে সই রয়েছে ১০০ দিনের প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসারের! রয়েছে মেমো নম্বরও। আর এখানেই যত গন্ডগোল! ভুয়ো মেমো নম্বর দিয়ে ১০০ দিনের কাজ করানোর অভিযোগ।


৮ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল মালদার ইংরেজবাজারে। প্রশাসন সূত্রে দাবি, তৃণমূল পরিচালিত যদুপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা, ড্রেন তৈরি ও গাছ লাগানোর জন্য, গত বছর ৩০ জুলাই এই অনুমোদনপত্রটি পাস হয়। 


সেখানে ২৯৮টি কাজের জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, এই অনুযায়ী বেশকিছু কাজও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ পেতেই সেই কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। খোদ জেলাশাসক জানিয়েছেন, 


প্রকল্প সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে, জানা যায় ভুয়ো মেমো নম্বরের ভিত্তিতে কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনপত্রে ১০০ দিনের প্রকল্পে জেলার নোডাল অফিসারের সই জাল করা হয়েছে। পুলিশ একদিকে ঘটনার তদন্ত করছে।  পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বৈভব চৌধুরী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



জেলাশাসকের নির্দেশে, বিডিওকে FIR দায়ের করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। ইংরেজবাজারের বিডিও সৌগত চৌধুরী জানান, ''একটা ফেক মেমো নম্বরের ঘটনা সামনে এসেছে। ডিএমের নির্দেশে এফআইআর করেছি। ৮ কোটি টাকার প্রকল্প যদুপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে। প্রশ্ন MUST - সরকারি কর্মী ছাড়া কেউ কি এই কাজ করতে পারে? 


প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জেলাশাসকের অনুমোদন পেয়ে প্রকল্পের মেমো নম্বর দেওয়া হয় পঞ্চায়েতগুলিতে। সেই অনুযায়ী সরকারি ওয়েবসাইটেও প্রকল্প লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু যদুপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে যা হয়নি।


অভিযোগ, এক্ষেত্রে জেলাশাসককে না জানিয়েই ভুয়ো মেমো নম্বর দেওয়া হয়েছিল। ফলে টাকা বরাদ্দ হলেও, সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকল্প লিপিবদ্ধ হয়নি। এই ঘটনা ঘিরে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। পাল্টা অভিযুক্তদের পাশে না দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।


দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুরি বলেন, ''মেমো নম্বরগুলিকে ফেক বলা হয়েছে, আসলে এগুলি ফেক নয়। এইভাবে কাজ করে, টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ৩ বছরে ১৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে মালদায়। তৃণমূলের নেতা-নেত্রী থেকে প্রশাসনের বড় কর্তারা জড়িত।''


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ''দল এই ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করে না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে প্রশাসন ও দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।''


যে পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে এত বিতর্ক, সেই তৃণমূল পরিচালিত যদুপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি।