করুণাময় সিংহ, মালদা: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে (Anganwadi Center) পচা ডিম এবং নিম্নমানের খেয়ে (Rotten Food) অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাচ্চারা, এমনই অভিযোগে মালদা জেলার (Malda District) হরিশচন্দ্রপুর। অভিযোগ ঘিরে এমনই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে হেনস্থার শিকার হন সিডিপিও। সুপারভাইজার, ওই কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং রাঁধুনিকে তালা বন্ধ করে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও।
কী ঘটেছিল?
মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর ৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বাচ্চাদের পচা ডিম এবং নিম্নমানের খাওয়ার দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গোটা ঘটনায় শাসকদলের দিকে আঙুল তোলে বিজেপি। অভিযোগ, তৃণমূলের আমলে মিড ডে মিল দুর্নীতি হচ্ছে। এক গোষ্ঠী ভাগ পাচ্ছে, অন্য গোষ্ঠী ভাগ পাচ্ছে না। যারা পাচ্ছে না, তারা বিক্ষোভ করছে। আর নোংরা রাজনীতির শিকার হচ্ছেন আধিকারিকরা। পাল্টা সাফাই দেয় তৃণমূল। অভিভাবকদের অবশ্য অভিযোগ, নিম্নমানের খাবার খেয়ে কয়েকজন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। এই নিয়েই বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। বিক্ষোভকারী অভিভাবক হাসেদুল ইসলাম বলেন, 'খাবারে পচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত ডিম দিয়েছিল। এই কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম হচ্ছে।এর আগে আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন না হওয়ার জন্য আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।' তাঁর দাবি, ওই ডিম খাওয়ার পর থেকে পেটের অসুখ এবং জ্বরে ভুগছে তাঁর নাতি। গত কাল অর্থাৎ বুধবার অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সুপারভাইজার রুমি মন্ডল। অভিভাবকদের সঙ্গে কথাও বলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সুপারভাইজার রুমি মন্ডল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বিনতি দাস এবং রাঁধুনীকে এক ঘরে তালা বন্ধ করে আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, বুধবারের সেই বিক্ষোভে সামিল ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিডিপিও আব্দুল সাত্তার। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন সিডিপিও। কথা বলতে গিয়ে সিডিপিওকেও হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। জানা গিয়েছে, ওই কেন্দ্রের কর্মী বিনতি দাসকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া...
মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগ এই প্রথম নয়। মালদার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস অঞ্চল সভাপতি আব্দুস শোভান বলেন, 'তৃণমূলের আমলে মিড ডে মিল দুর্নীতি হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের মদতে হচ্ছে এই দুর্নীতি। যে গোষ্ঠী ভাগ পাচ্ছে না তারা এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কিন্তু সেই বিক্ষোভের মুখে পড়ে হেনস্থা হচ্ছে আধিকারিকদের। যা খুব দুর্ভাগ্যজনক।' এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, 'ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পচা ডিম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাই ওখানে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। যাঁদের মধ্যে আমাদের তৃণমূলের কর্মীরাও রয়েছেন। কোথাও কোনও অন্যায় হলে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখাবে।' অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার রুমি মন্ডল বলেন, 'আমি এখানে অভিভাবকদের অভিযোগ শুনতেই এসেছিলাম। যেটা জানতে পেরেছি, ওঁরা বাচ্চাদের জন্য সেদ্ধ ডিম বাড়ি নিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে খোসা ছাড়িয়ে ডিম খায় বাচ্চারা। যখন পচা ডিম দেখল, কেন বাচ্চাদের খেতে দিল? কিন্তু এখানে ওঁরা কোনও কথা শুনছেন না বা বলছেন না।' সিডিপিও আব্দুল সাত্তার পরে বলেন, 'আমি এই কর্মীকে বদলি করে দিচ্ছি এবং এর জায়গায় একজন নতুন কর্মী আসবে। প্রত্যেক বাচ্চাকে কী ভাবে এবং কতটা পরিমাণে খাবার দেওয়া হবে সেই তালিকা দিয়ে গেলাম। আশা করছি পরবর্তীতে কোন সমস্যা হবে না।'
আরও পড়ুন:চাকরি-প্রতারণাতেও জড়িয়ে টিকাকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন! চার্জশিটে দাবি ইডির