করণাময় সিংহ, মালদা : ওড়িশার বালেশ্বর যেন মৃত্যুপুরী। দুর্ঘটনার কবলে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়াগামী যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’শো। 


 পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্য


ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মালতিপুরের বাসিন্দা মাশরেকুল। বছর ২৩-এর তরুণ এলাকার আরও ৩ জনের সঙ্গে চেন্নাই যাচ্ছিলেন কাজের খোঁজে। দুর্ঘটনায় মাশরেকুলের মৃত্যু হয়। বাকি ৩ জন আহত।

বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, ছয় ও এক বছরের দুই সন্তান। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাই একদিকে পুত্রশোক, আরেকদিকে ভবিষ্যতের চিন্তা। বামনগোলার ভোমরাইলের বাসিন্দা বছর আঠাশের নিত্যম রায়েরও খোঁজ মিলছে না বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। 

ছেলের মুখে-ভাত দেওয়া আর হল না সাদ্দামের 


পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কইখান গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম শেখ। কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। দেড়মাস আগে ছেলে হয়েছে শুনে বাড়িতে আসেন। কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার আগে জানিয়েছিলেন, পাঁচ মাস পর ফিরে এসে ঘটা করে ছেলের অন্নপ্রাশন করবেন। অপূর্ণই থেকে গেল ইচ্ছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে চেন্নাই যাওয়ার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল সাদ্দামের। একরত্তি ছেলেকে নিয়ে অকূল পাথারে স্ত্রী। 


এক সঙ্গে মৃত্যু ৩ ভাইয়ের


বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামের তিন ভাইয়ের। ধান রোয়ার কাজে অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিলেন দিবাকর, নিশিকান্ত ও হারান গায়েন। ৩ ভাইয়েরই মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, একই গ্রামের বাসিন্দা দুই পরিযায়ী শ্রমিক বিকাশ হালদার ও সঞ্জয় হালদারেরও মৃত্যু হয়েছে।  


লাশের পাহাড়ে বাবার খোঁজ


ক্যানিংয়ের বাসিন্দা সামসুদ্দিন সর্দার। বছর পঞ্চাশের পরিযায়ী শ্রমিক সামসুদ্দিন পরিবারের দুই সদস্যকে নিয়ে কাজের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ যাচ্ছিলেন। ছেলের সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়। তারপর থেকেই খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে ক্যানিং থেকে বাহানাগায় এসে লাশের পাহাড়ে বাবার খোঁজ পেলেন ছেলে। 


বাসন্তীর বাসিন্দা আরেক ব্যক্তি এখনও খোঁজ পাননি ভাইপোর। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন দুর্ঘটনাস্থলে। মৃতদেহের সারির মধ্যে খুঁজে চলেছেন প্রিয়জনকে।


কটকে যাওয়া আর হল না


হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা পিনাকী মণ্ডল। পায়ে ব্য়থার চিকিৎসা করাতে এই প্রথমবার কটকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফেরা আর হল না। বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছেই শ্য়ালিকার বাড়ি। খবর পেয়ে তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে এসে খোঁজ শুরু করে। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে।