অভিজিৎ চৌধুরী, চাঁচল(মালদা) : উমার বিদায়লগ্নে সম্প্রীতির সুর । দশমীর গোধূলিতে দেবী দুর্গার বিদায়-পর্ব, আর তাতে সামিল হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। আলো জ্বালিয়ে বিদায় জানালেন মা-কে। এ ছবি মালদার পাহারপুর মরা মহানন্দার সতীঘাটের। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এই রীতিতে এসেছে সামান্য বদল। আগে লণ্ঠন জ্বালিয়ে সাহুরগাছির বধূরা দাঁড়িয়ে থাকতেন মরা মহানন্দার ওপারে। আর এবার নিরঞ্জনের সময় ওপারের আকবর আলি জ্বালালেন চার্জার লাইট। সম্প্রীতির এই কোলাজেই রব উঠল...আবার এসো মা।
চাঁচলের রাজা রাম চন্দ্র রায় বাহাদুর আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই পুজোর শুরু করেছিলেন। রাজবাড়ির পুজো নামে পরিচিত চাঁচলের এই পুজো। বর্তমানে রাজা নেই, নেই তাঁর রাজপাট। কিন্তু রয়ে গিয়েছে রাজ আমলের রীতি। আর সেই রীতি মেনেই দশমীর দিন গোধূলি লগ্নে চাঁচল পাহাড়পুরের চণ্ডী মন্দিরের সামনে ঠিক দুশো মিটার দূরে মহানন্দায় বিসর্জন দেওয়া হল প্রতিমার। আর এই বিসর্জনের সময় নদীর ওপারের বেশ কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠনের আলো জ্বালিয়ে মা-কে বিদায় জানান। কেউবা জ্বালান ফ্লাশ ও চার্জার লাইট।
কথিত রয়েছে, কোনও এক সময়ে চাঁচলের মরা মহানন্দা নদীর তীরবর্তী এলাকার সাহুরগাছি-বিদ্যানন্দপুর গ্রামে মহামারী শুরু হয়েছিল। সেই সময় নাকি পাহাড়পুরের চণ্ডী মন্দিরের দেবী স্বপ্নে তাঁদের বিসর্জনের সময় আলো দেখাতে বলেন। সেই থেকেই ওই এলাকার মানুষেরা আজও মাকে আলো জ্বালিয়ে দশমীর দিন বিদায় জানান।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঠিক গোধূলি লগ্নে মরা মহানন্দার ওই পাড় থেকে দেবী-কে বিদায় জানান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে আস্তে আস্তে সেই হ্যারিকেনের প্রচলন উঠতে চলেছে। এখন মোবাইলের ফ্ল্যাশ বা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দেবী-কে বিদায় জানান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আকবর আলি বলেন, পূর্ব পুরুষদের রীতি মেনে আমিও আলো দেখালাম দেবীকে।
চণ্ডী মণ্ডপের পুরোহিত অচিন্ত্য মিশ্র জানান, এবারও সুষ্ঠুভাবে মা-কে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। ওপার থেকে সংখ্যালঘুরা আলো জ্বালান। এই ছবি প্রতিবারই দেখা যায়।