করুণাময় সিংহ, মালদা: শীত মানে পিঠে-পায়েস, আর পিঠে-পায়েসে একটু গুড় না হলে চলে? শীতের মরশুমে গুড়ের চাহিদাকে (Malda Jaggery News) সম্বল করেই আর্থিক হাল ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে মালদার গ্রামে। নির্দিষ্ট করে বললে, পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গ্রাম এখন খেজুর গুড় তৈরিতে এতটাই ব্যস্ত যে দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। 


বাড়ছে চাহিদা...
গ্রামে খেজুর গুড় তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে একটি বিষয় কম-বেশি মেনে নিয়েছেন। তাঁদের তৈরি গুড়ের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে জোগানেরও চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সরকারি সাহায্য না পেলে এই ব্যবসা আড়েবহরে বাড়ানো অসম্ভব। আক্ষেপটা এখানেই। বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং জোগানের জন্য নিরলস শ্রম দিয়েও ব্যবসা বাড়াতে পারছেন না তাঁরা। গ্রামের ১৮টি পরিবার এই গুড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত৷ মূলত তাঁরা কৃষিজীবী৷ তবে শীত পড়লেই খেজুর গুড় তৈরির কাজে নেমে পড়েন৷ অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত তাঁদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না৷
দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা, এক ব্যক্তির মতে, এই এলাকায় খেজুর গাছের রস খুব মিষ্টি৷ ফলে গুড়ের স্বাদও খুব ভাল৷ পাইকারদের আনাগোনাও কম নয়। কিন্তু আর্থিক প্রতিবন্ধকতা এবং সরকারের উদাসীনতার জন্য কিছুতেই ব্যবসার পরিসর বাড়ানো যাচ্ছে না, আক্ষেপ তাঁর। গ্রামের অনেকেই মনে করেন, ব্যবসা বাড়লে আখেরে জেলার অর্থনীতিই শক্তিশালী হবে। শুধু সরকারি সাহায্য দরকার। সার্বিক ভাবে, খেজুর গুড় শিল্প নিয়ে বেশ খানিকটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। 'শিউলি' অর্থাৎ যাঁরা খেজুর রসের গুড় তৈরির কাজে গাছ চড়ার কাজ করেন, তাঁদের সংখ্যাও কমে আসছে বলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা ঘনাচ্ছে। তবে তার মধ্যে মালদার এই খবর কিছুটা হলেও খেজুর গুড় শিল্পে অক্সিজেন জোগাতে পারে। যদিও সরকারি সাহায্য না পেলে সেই আশার আলো কতটা উজ্জ্বল হবে, সেটা নিয়ে সন্দিহান পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দারা।


সার্বিক ছবি...
করোনা-অতিমারি যে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জন্য ভয়ঙ্কর সমস্যা তৈরি করেছিল, সেই ইঙ্গিত বছরদুয়েক আগেই মেলে। সে সময় সাধারণ মানুষের রোজগারে ঘাটতি ও লাগামছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি শিউলিদের কাজেও প্রভাব ফেলে। তার উপর সমস্যা তৈরি করে ঘূর্ণিঝড় 'আমফান'। শিউলিরা বলেছিলেন, 'আমফানে খেজুর গাছের স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে। গাছে কমেছে রসের পরিমাণ।' সেই নিরিখে মালদার ছবি অনেকটাই ইতিবাচক। যদিও এর পর কী হবে, সেটা নির্ভর করছে সরকারের উপর, বিশ্বাস দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দাদের।


আরও পড়ুন:আগে গাড়িসমেত তুলে আছাড়, পরে পা দিয়ে পিষে হত্যা, শিলিগুড়িতে হাতির হানায় মৃত ১