অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: মহানন্দা-ফুলহার নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকে বেআইনিভাবে (illegal) বালি কেটে বিহারে পাচারের অভিযোগ। পাচার করতে গিয়ে চারটি ট্রাক্টর সহ পুলিশের হাতে ধৃত ৪ যুবক। জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল এই বালি পাচারের (Sand smuggling) কাজ। এই রাজ্য থেকে বালি নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী বিহারে বিক্রি করা হত বলে অভিযোগ। প্রচুর পরিমাণে বালি কাটার ফলে বর্ষাকালে সহজেই নদীর জল ঢুকে যেত নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে। এলাকাবাসী এবং বিরোধীদের অভিযোগ, এর পেছনে হাত রয়েছে শাসকদলের নেতাদের। যদিও জেলা তৃণমূল (TMC) নেতৃত্বের দাবি পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।


বালি পাচারে গ্রেফতার ঘিরে রাজনৈতিক তরজা


এই নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার দৌলত নগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভালুকা গোবরা ঘাটে। অভিযোগ সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই ফুলহার এবং মহানন্দা নদীর তীর থেকে বালি কেটে বেআইনিভাবে পাচার করা হত। বুধবার সকালে সেভাবেই বালি নিয়ে যাওয়ার পথে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ আটক করে বালিভর্তি চারটি ট্রাক্টর। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় চার যুবক। ধৃত চার যুবক ৩০ বছরের মোহাম্মদ কুসবান, ২০ বছরের শেখ জুলফিকার, ৩১ বছরের আলাউদ্দিন এবং ২০ বছরের আতিউর রহমান। হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় রয়েছে বিহার সীমান্ত। ফলে বিহার লাগোয়া এই এলাকা থেকে বিভিন্ন জিনিস সহজেই পাচার করে দেওয়া হয় বিহারে। এমনকী এর আগেও অবৈধভাবে মাটি কেটে তা বিহারে পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে বালি বিহার ছাড়া আর কোথায় কোথায় পাচার করা হত বা সমগ্র চক্রটিতে কারা কারা জড়িত রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।


স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি


স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমার মণ্ডল বলেন, 'সকালে গোবর ঘাটে মাটি কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে। আজ নয় দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চলছিল। যদিও এর আগে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভবিষ্যতে এই কাজ বন্ধ না হলে এলাকাবাসী বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।'


অপর স্থানীয় বাসিন্দা কমল যাদব বলেন, 'বালি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক্টর সমেত পুলিশ গ্রেফতার করে। এই ভাবে বালি কাটার ফলে আমাদের খুব সমস্যা হত। বর্ষার সময় গর্ত হয়ে জল জমে যায়। এর পেছনে অবশ্যই বড় বড় নেতাদের হাত আছে। এই বালি এখান থেকে পাচার করে বিহারে বিক্রি করা হত।'


বিজেপি নেতা তথা উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, 'এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। দলটা সম্পূর্ণ কাটমানি, চুরি এবং তোলাবাজির উপর চলে। পুলিশ যে গ্রেফতার করেছে, হয়তো ইতিমধ্যে পুলিশের ওপর চাপ এসে গেছে। আদৌ এর সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না দেখা যাক।'


আরও পড়ুন: Petrol-Disel Price Hike: চারদিনে ৩ বার বাড়ল জ্বালানির দাম, কলকাতায় কত হল?


তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ রায় চৌধুরী বলেন, 'অপপ্রচার করা বিজেপির কাজ। দল এই ধরনের জিনিসকে বরদাস্ত করে না। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করেছে বলেই ওই চারজনকে গ্রেফতার করেছে।'


হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানান বেআইনিভাবে বালি কাটা হচ্ছিল। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বালি সহ চারটি ট্রাক্টর ও চার যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথাও যদি বেআইনিভাবে বালি কাটা হয় তাহলে ধরপাকড় করার নির্দেশ রয়েছে রাজ্যের। অভিযুক্ত চার যুবককে চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে।