অভিজিৎ চৌধুরী, হরিশচন্দ্রপুর: ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় পরিযায়ী শ্রমিকের ( Migrant Worker )মৃত্যু। চাঁদা তুলে মৃতদেহ ফেরানোর উদ্যোগ প্রতিবেশীদের। সৎকারেও সামিল হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়। মালদার (Malda) হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার গড়গড়ি গ্রামের চন্দন মহলদারের মৃতদেহ সৎকারে দেখা গেল সম্প্রীতির অনন্য নজির।


লকডাউনে (Lockdown) কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। লকডাউনে হারিয়েছিলেন কাজ। আশা ছিল অন্তত ব্যবসায় হাল ফিরবে। কিন্তু না তা হল না। ফের লোকসান। মহামারীর কোপেই মার খেল ব্যবসা। তাই সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে আবার সাতদিন আগে পাড়ি দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু তিনদিন আগেই ট্রেন থেকে পড়ে সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনের কাছে মৃত্যু হল হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা চন্দন মহালদারের।


স্থানীয় পুলিশের তত্ত্বাবধানেই সেখানেই চন্দনের মৃতদেহ পোস্টমর্টেম করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর ফেরাতেই দেখা যায় সমস্যা। অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ আনতে খরচ ৯০ হাজার টাকা। তাই স্থানীয়দের চাঁদা তুলে টাকা যোগাড় করে ফেরানো হয় চন্দনের মৃতদেহ। আর শেষকৃত্যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকেই দেখা গেল চন্দনের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করতে। তাঁর মুসলিম প্রতিবেশীরাই কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গেলেন ।


স্থানীয় সূত্রে খবর চন্দনের এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। আগেই মারা গিয়েছেন চন্দনের বাবা অর্জুন মহলদার। বৃদ্ধা মা সারথি মহালদার হাটে হাটে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ স্ত্রীও। এই অবস্থায় মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করে লকডাউনের মধ্যে সবজির ব্যবসা শুরু করেছিলেন চন্দন মহালদার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই ব্যবসাও করা যায়নি। তাই ফের কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে।


চন্দনের স্ত্রী প্রতিমা মহলদার জানালেন, “দু'বছর ধরে কোনও কাজ নেই। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদের টাকা নিয়ে তাই সবজির ব্যবসা শুরু করেছিল। কিন্তু লকডাউনে ব্যবস্থা মার খেয়েছিল। তাই বাধ্য হয়ে আবার ভিন রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই যাওয়াটা যে শেষ যাওয়া হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান এলাকায় কাজ নেই। তাই বাইরে গিয়ে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন। আমরা চাইব প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক।’’