অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা : ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে এরাজ্যের শ্রমিকের মৃত্যুর একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে সাম্প্রতিককালে। ফের একবার তার পুনরাবৃ্ত্তি হল। ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু হল আরও এক পরিযায়ী শ্রমিকের। নাম শেখ জহিরুল। কাজ শেষ করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর নিথর দেহ পৌঁছয় বাড়িতে। তাঁর বাড়ি মালদার ইংরেজবাজার থানার শোভনগর অঞ্চলের মোহনপুর গ্রামে। বাড়িতে দেহ পৌঁছাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মাস আগে মিরাটে টাওয়ারের কাজে গিয়েছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর কাজ করে ফেরার পথে ট্রাক্টরের ধাক্কায় আহত হন তিনি। তারপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসা চলাকালীন ২৪ তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ তাঁর মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
গত অগাস্ট মাসে মিজোরামে নির্মীয়মাণ ব্রিজ ভেঙে মালদার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছিল। চতুর্দিকে শুধু প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা। অসহায়, অনিশ্চিত ভবিষ্য়তের ভাবনা। মিজোরামে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা মালদার বুক থেকে কেড়ে নেয় ২৩টি তরতাজা প্রাণ। ভিন্ রাজ্য়ে রোজগারের আশায় গিয়ে মূহুর্তে প্রাণ হারান বহু পরিযায়ী শ্রমিক।
এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে কাজের সুযোগ না থাকাতেই ভিন রাজ্য়ে কাজের খোঁজে যেতে হচ্ছে শ্রমিকদের বলে কটাক্ষ শানিয়েছিলেন বিরোধীরা। সেই সেতু-বিপর্যয়ের রেশ কাটতে না কাটতে কয়েকদিনের মাথায় ফের ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ যায় মালদার (Malda) এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মৃত তরুণের নাম ছোটু মোমিন। মানিকচকের এনায়েতপুরের বাসিন্দা ২১ বছরের মোমিন অসমের জোড়হাটে রেলের টাওয়ার বসানোর কাজে গিয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, টাওয়ারে উঠে ওভারহেড তার লাগানোর সময় ওই শ্রমিক পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এখানে কাজ না পেয়েই বাইরে যেতে হয়েছিল বলে দাবি করে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার।
মিজোরামের ঘটনার পরই পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্য়ুর ঘটনাকে হাতিয়ার করে, ফের এরাজ্য়ে কর্মসংস্থানের বেহাল দশার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও একটি ঘটনা। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরও দেখা গিয়েছিল, এ রাজ্য থেকে কত মানুষ প্রতিদিন শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন। তখনও একই বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
কেন ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যেতে হয় বাংলার শ্রমিকদের? তাহলে কি বাংলায় কর্মসংস্থান নেই? এই প্রশ্ন আবার সামনে আসছে।