অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: পশু-পাখি প্রেমের (another lover) অনন্য নিদর্শন। নিজে যা খান তাইই খাওয়ান আদরের প্রাণীগুলিকে। এমনকী নিজের হাতে রান্না করেও খাইয়ে দেন। একা হাতে সব কাজ সামলেও পশুপাখিদের নিয়মিত রান্না করে খাওয়ান মালদার (Malda) বাণী দেবী (Bani Devi)। 


পশুপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত


পশু-পাখিদের ভিড়ে তাঁর বাড়ি একপ্রকার ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা। নিজের হাতে তাদের সেবা শুশ্রূষাও করেন। মালদার বাণী দেবীর স্বামীও ছিলেন পশুপ্রেমী। স্বামীর মৃত্যুর পরেও স্ত্রী নিয়মিত পশু পাখিদের খাইয়ে চলেছেন। তাঁর উপস্থিতিতে কোনও প্রাণী অভুক্ত থাকে না। আর পশুপাখিরাও দিব্যি তাঁর হাতে খাচ্ছে। এমনই সুন্দর এক দৃশ্য ধরা পড়ল ক্যামেরায়।


মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা বাণী রায়। স্বামী মনি মোহন রায় গত হয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের ক্লার্ক ছিলেন তিনি। দুই মেয়ে। তাঁদের এক জন বিবাহিত এবং অন্যজন কলকাতায় পড়াশোনা করেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই ছিলেন পশুপ্রেমী। তবে স্বামীর মৃত্যুর পরেও অক্ষত স্ত্রীর পশুপ্রেম।


কোচবিহারের বাসিন্দা বাণী রায়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ রায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ওসি ছিলেন। সেই সূত্রে তিনিও হরিশচন্দ্রপুরেই বড় হয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। পশুপাখিদের খাওয়ানোর জন্য প্রত্যেক দিন তিনি নিজের হাতে রান্না করেন। নিজের হাতে আদরের 'পোষ্য'দের খাইয়েও দেন। পাড়ার কুকুর বিড়াল থেকে শুরু করে কাক শালিক, প্রত্যেকেই বাণী দেবীর নিত্যদিনের সঙ্গী। তাদের জন্য প্রত্যেক দিন মাছ মাংস রান্না হয়। তাদের ভিড়ে বাড়ি যেন ছোট্টখাট্টো  একটা চিড়িয়াখানা।


একটি ওষুধের দোকান রয়েছে বাণী দেবীর।  একা হাতে সব কাজ সামলেও সময়মতো পশু পাখিদের খাওয়ান। কুকুর বিড়ালের অসুখ হলে সেবা শুশ্রূষাও করেন বাণী দেবী। এই পশুপাখিদের নিয়েই আনন্দে দিব্যি চলছে তাঁর জীবন। তবে শুধু পশুপ্রেমী নন, তিনি পরিবেশপ্রেমীও বটে। তাই তিনি পাড়ায় বৃক্ষরোপন করেন। সেইসব বৃক্ষ পরিচর্যাও করেন। অনেকেই অকারণে পাড়ার কুকুর বিড়ালদের ওপর অত্যাচার করে। সেই নিয়েও ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করেন বাণী দেবী। অবলা জীবদের প্রতি অত্যাচার হোক বা গাছ কেটে নেওয়া, তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। 


আরও পড়ুন: NCRB Report: 'বধূ নির্যাতন, অ্যাসিড হানা, পণ না পেয়ে হত্যায় ভয়াবহ পরিসংখ্যান' অমিত মালব্যর ট্যুইট খোঁচা


পশুপ্রেমী বাণী রায় বলেন, 'আমার স্বামীও পশুপাখি খুব ভালবাসতেন। আমার তো ওদের নিয়েই দিন কাটে। ওদের জন্য রান্না করি। নিজের হাতে খাইয়ে দিই। ওদের অসুখ করলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কিন্তু পাড়ার মানুষজন অকারণে অত্যাচার করে কুকুরদের ওপর। আমার সেটা দেখে খুব রাগ হয়।' বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ মানুষই যখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, সেখানে বাণী দেবীর এই নিঃস্বার্থ পশু ও পরিবেশ প্রেম সত্যি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।