পূর্ব বর্ধমান: রাজ্যের শস্যের গোলা বলা হয় পূর্ব বর্ধমানকে (Purba Bardhaman)। সোমবার সেই জেলাতেই দাঁড়িয়ে মাটি উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই কৃষকদের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চাষিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধান বিক্রির বিষয়টি। সেই সমস্যা দূর করতে রাজ্যে একাধিক কিষাণ মান্ডি (Kisan Mandi) তৈরি হয়েছে। এদিন ধান বিক্রি নিয়ে মমতা নিশানা করেন কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, '২৫৩ কোটি লক্ষ মেট্রিক ধান উৎপাদন হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ১ লক্ষ মেট্রিক টনও ধান (Paddy) কেনেনি। অথচ যেখানে ধান কম হয়, সেখান থেকে কেনে। অভাবী ফসলের বিক্রি বন্ধ করতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।'
এফআইআর-এর নির্দেশ:
কিষাণ মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে যাতে কৃষকদের সমস্যা না হয় তার জন্য এর আগেও বারবার বার্তা দিয়েছেন মমতা (Mamata Banerjee)। এদিনও তিনি বলেন, 'আমার কাছে অভিযোগ আসছে, অনেক সময় চাষিরা যখন কিষাণ মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে যান, তখন তাঁদের ঘোরানো হয় বা তাঁদের নানাভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমি আজ থেকে বলে যাচ্ছি, এমন কেউ যদি ধান ফিরিয়ে দেয়, যদি কেউ আপনাকে আপনার সময়মতো কাজটা না করে, আপনি বিডিও অফিসে গিয়ে এফআইআর করবেন, থানায় গিয়ে এফআইআর করবেন। আর ওসিকে বলব, এগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোনও কৃষক তাঁর ধান নিয়ে ফিরে না আসে। যে দায়িত্ব নেবে না, তাঁর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই।' এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন পঞ্চায়েতগুলিকেও। তিনি বলেন, 'পঞ্চায়েতগুলোকেও বলব, আরও একটু সতর্ক হোন। যাঁরা ধান তৈরি করছে, তাঁর যখন বিক্রি করতে যাচ্ছে, তাঁদের ওজনটা যেন ঠিকমতো নেওয়া হয় এবং কৃষক মান্ডিগুলো যেন ঠিকমতো কাজ করে। অ্যাগ্রো মার্কেটিংয়ে থেকে যদি কেউ ঠিকমতো কাজ না করে, আমি জেলাশাসককে বলে যাচ্ছি, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এইরকম একটা কেস বাঁকুড়ায় ধরা পড়েছিল এবং আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।' চাষিদের পাশে থাকার বার্তা দিতে সিঙ্গুর আন্দোলন প্রসঙ্গও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। এদিন তিনি বলেন, 'কৃষকদের জন্য ২৬ দিন অনশন করেছি, কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকবিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার আগে পাশে দাঁড়িয়েছি।'
নতুন কৃষকবন্ধু:
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা সময় নানাভাবে কৃষকদের (Farmers) জন্য নানা প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই একটা কৃষকবন্ধু প্রকল্প। সেই প্রকল্পেরই অধীনে কৃষকদের টাকা পাঠানো হয় এদিন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'খরিফ মরশুমের জন্য নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্প করেছি, তাতে ৭৯ লক্ষ কৃষককে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি সাহায্য দেওয়া হল। ৭৯ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেল। ভোটের সময় বলেছিলাম আমরা জিতলে ১০ হাজার করব, খেত মজুরদের ডবল করব। এবছর ১০ হাজার করে চালু করেছি। এটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ।'
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:
তৃণমূল সরকারের আমলে কৃষকদের আয় বেড়েছে বলে বারবার দাবি করা হয়েছে তৃণমূলের (TMC) পক্ষ থেকে। এদিন সেই সুর ধরেই মমতা বলেন, 'কৃষকদের আয় তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাল, তৈলবীজ, ভুট্টা, সুগন্ধী চাল, পেঁয়াজের ভাল দাম পাওয়া যায়। আমরা এগুলোর উপর জোর দিয়েছে। ভুট্টার ডাল, তৈলবীজের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরা দাম পাচ্ছেন, আমরা তাদের থেকে ধান কিনছি।' এই সাফল্যের জন্য কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, 'কৃষকদের মৃত্যুতে ২ লক্ষ টাকা পরিবারকে দিই। কৃষকদের খাজনা মকুব, শস্য বিমার টাকা আমরা দিচ্ছি। ৬৬ লক্ষের বেশি কৃষক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নতুন করে চাষ করার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।' ঝড়-বৃষ্টির কারণে বারবার উপকূল লাগোয়া জেলাগুলিতে ক্ষতির মুখে পড়ে চাষ। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরে বারবার নোনা জলে ধান নষ্ট হয়। সেই জেলাগুলির জন্য স্বর্ণ ধান তৈরি করা হয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। একটি ট্রেনিং সেন্টারও তৈরি করা হয়েছে। এদিন সেই প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। চাষের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প। রাজ্যে ৬০ হাজারের বেশি সেচ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলে এদিন বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: আশা আইসিডিএস কর্মীদের জন্য ৮ হাজারের ফোন, ঘোষণা মমতার