আশাবুল হোসেন: বিজেপির নবান্ন অভিযানকে (BJP Nabanna Rally) গুরুত্ব দিতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এদিন তিনি বলেন, 'বিজেপির নবান্ন অভিযানে লোক হয়নি। বেলুন ফুটো হয়ে গেছে, গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।' খড়গপুরে ২ মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের বৈঠকে মন্তব্য মমতার।


মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দলীয় বৈঠক ছিল। সেই দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির সঙ্গে মানুষ নেই। তাই বিজেপিকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। নবান্ন অভিযানে বিজেপির লোক হয়নি, তাদের বেলুন ফুটো হয়ে গিয়েছে। তাই বিজেপির অভিযানকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। দলীয় বৈঠকে এমনই বার্তা দেন তিনি।


জখম নেতার খোঁজ: 
এদিন তমলুকের টোল প্লাজার কাছে বিজেপি কর্মীদের হাতে মার খেয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান তারক জানা। গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি। এদিন তাঁর খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জখম নেতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ নিতে বলেন তিনি। সৌমেন মহাপাত্রকে এই নির্দেশ দেন তিনি। তারপরেই ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতে যাচ্ছেন সৌমেন মহাপাত্র।  

'আক্রান্ত' তৃণমূল নেতা
নবান্ন অভিযান ঘিরে তমলুক টোল প্লাজা এলাকায় ধুন্ধুমার। তৃণমূল প্রধানকে মাটিতে ফেলে লাথি, মাথায় লাঠির বাড়ি, মুখে ঘুঁসি। ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে জামাও। এদিন নবান্ন অভিযানে যাওয়ার পথে তমলুক টোল প্লাজার কাছে আটকানো হয় হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে। প্রতিবাদে অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। বিক্ষোভ চলাকালীন সেখান দিয়ে যাওয়া তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান তারক জানাকে দেখে তেড়ে যান বিজেপি কর্মীরা। তাঁকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি তৃণমূল প্রধান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স ছিঁড়তে বাধা দেওয়ায় হামলা, অভিযোগ তৃণমূল প্রধানের।


দিনভর ঝামেলা:
বিজেপির নবান্ন অভিযানের শুরুতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথমে সাঁতরাগাছিতে পুলিশের গার্ড রেল টপকানোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। এরপর পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় কাচের বোতল, ইট, পাথর, বাঁশ। গার্ড রেল ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয় পুলিশের কিয়স্ক। পাল্টা জল কামান ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ (Police)। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস (Tear Gas)। লাঠি উঁচিয়ে বিজেপি কর্মীদের তাড়া করে পুলিশ। রাস্তায় ফেলে মারা হয় এক বিজেপি কর্মীকে। অন্যদিকে, হাওড়া ময়দানের কাছে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেন বিজেপি কর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ ধরে খণ্ডযুদ্ধ চলার পরও পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনতে পারেনি পুলিশ। সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ও পাশের নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে পাথর ভেঙে এনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের হাতে দেখা যায় গুলতিও। পুলিশ পাল্টা ইট ছোড়ার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়, ছোড়ে লঙ্কা গ্যাসও। কিন্তু দীর্ঘক্ষণের চেষ্টাতেও কোনও কাজ হয়নি। বরং বিজেপি সমর্থকদের বিভিন্ন দিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত পাথর-ইটবৃষ্টির চোটে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পুলিশ। অন্যদিকে, এমজি রোডে এদিন পুলিশের পিসিআর ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠে এমন অভিযোগ। জল দিয়ে আগুন নেভান দমকলকর্মীরা। তারপরেই মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসের বাইরে শুরু হয় তুমুল ধস্তাধস্তি। তিন আইপিএসের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী যায় ওখানে। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর চালিয়ে ওখানেই দুষ্কৃতীরা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ উত্তপ্ত থাকে গোটা এলাকা।

আরও পড়ুন: 'বিনা প্ররোচনায় গ্রেফতার', লকেটের ফেসবুকে বিস্ফোরক শুভেন্দু