কলকাতা: আন্দোলন করে উঠে এসেছেন ক্ষমতায়। এ যাবৎ হাজার ঝড়-ঝাপটা সইলেও, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়েনি কখনও। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ থেকে গরু, কয়লাপাচারে একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর নাম যত জড়িয়ে গিয়েছে, ততই তাঁকে লক্ষ্য করেও ছুটে এসেছে প্রশ্নবাণ। সেই আবহেই নিজের দিনযাপনের 'চরৈবতি মন্ত্র' ফাঁস করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, কোনও উপমা, উপাধি নয়, তিনি মানুষের লোক, এই পরিচয়েই বাঁচতে চান। 


জেলাসফরে বুধবার নানা রূপে দেখা গিয়েছে মমতাকে। এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার টাকি থেকে জলপথে সুন্দরবনের দিকে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী। এক দিকে ভারতের হাসনাবাদ, অন্যদিকে বাংলাদেশ, ইছামতি দিয়ে এগিয়ে চলে লঞ্চ। তার স্টিয়ারিং হুইলেও হাত রাখেন মমতা। এর পর গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে হাত লাগান চাটাই বোনা, ঝাড়ু বাঁধায়। সেই উঠোনেই আবার নড়বড়ে চেয়ারে ওল-ট্যাংরা দিয়ে মোটা চালে ভাত মেখে খান তৃপ্তি করে, বহু বছর আগে দুপুরে ভাত খাওয়া ছেড়ে দেওয়া সত্ত্বেও। 


দিনভর মমতার এই সব কার্যক্রম ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তার নানা রকম বিচার-বিশ্লেষণও উঠে এসেছে। কিন্তু রাতে নিজে মনের কথা লিখলেন মমতা। ফেসবুকে দিনভরের কার্যক্রমের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে আবেগ ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। লেখা শুরুই করেছেন, 'মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক' বাক্যে। 


দীর্ঘ পোস্টে এ দিন মমতা লেখেন, 'গ্রাম বাংলার সাথে আমার নাড়ির বন্ধন অচ্ছেদ্য গ্রন্থিতে আবদ্ধ। আজ উত্তর ২৪ পরগনা সফরে সেই বন্ধন আরও সুদৃঢ় হল। বাংলার মানুষ পরিচিত অতিথি-বৎসল হিসেবে। আজ এই জেলার খাঁপুকুরে আবারও সেই অভিজ্ঞতা হল। এক স্থানীয় বাসিন্দাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, 'আপনারা কী খাচ্ছেন?' তাঁরা জবাব দেন, 'ভাত, ট্যাংরা মাছের ঝাল, আলু ওলের তরকারি।' আমিও মহানন্দে তাঁদের সাথে বসে পড়ি মধ্যাহ্নভোজে। তাঁরা আমাকে চামচ এগিয়ে দেন ভাত খেতে। আমি বলি, 'আমি তো চামচে খাই না! আপনাদের মতো হাত দিয়েই খাই।' সেই সময় সবার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দেখে আমার মনে হয়, আমি তাঁদের পরিবারেরই একজন। গ্রামের বাড়ির দাওয়ায় বসে প্রাণের আলাপচারিতার সঙ্গে এই খাবারের স্বাদ অমৃতসম। পাশাপাশি তাঁদের সাথে হাত লাগলাম ঝাঁটা বোনায়। তাঁদের শিল্পসত্ত্বা দেখে আমি মুগ্ধ'।



মমতা আরও লেখেন, 'স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গেও অন্তরঙ্গ বার্তালাপ হয়। সবার মধ্যে বিতরণ করা হয় শীতবস্ত্র। টাকি গভর্নমেন্ট কলেজের নতুন বিল্ডিং-এর জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মই বাংলার আলোর দিশারী। আমি দৃঢ়প্রত্যয়ী, তাঁদের অধ্যবসায়, প্রতিভা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বাংলাকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। বাংলা আমাদের গর্ব, রাজ্যবাসী আমার প্রাণের দোসর। প্রশাসনিক ব্যস্ততার ফাঁকে এই সব দিনযাপন-ই আমার চরৈবেতি মন্ত্র। মানুষের ভালবাসাই রাজ্যের উন্নয়নে আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে আমায় প্রেরণা জোগাবে'।


বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সম্প্রতি একাধিক জেলা সফরে বিভিন্ন ভুমিকায় দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। একেবারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। একদিকে একের পর অভিযোগে, যখন বিরোধীদে আক্রমণে লাগাতার বিদ্ধ হচ্ছে দল, সেই সময় মমতার এই উদ্যোগ কতটা সাড়া ফেলে, সে দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।