কলকাতা: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য থেকে দেশ। সেই প্রেক্ষাপটে  নারী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। নবান্নের তরফে নির্দেশিকায় জানান হয়েছিল মহিলাদের নাইট শিফট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এই নির্দেশ ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। 


নানাক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের বক্তব্য, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রশ্নে, এটা কোনও পন্থা হতে পারে না। 


মেয়েরা যখন রাতের শহরে নিরাপদে চলাফেরার জন্য রাতের দখল নিচ্ছে, তখন সরকার সমাধান সূত্র খুঁজতে গিয়ে নাইট ডিউটি যথাসম্ভব না দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছে? এই ভাবনাতেই বাড়ে বিতর্ক। কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী অনেক মহিলাকেই নাইট শিফট করতে হয়। এক চিকিৎসক পড়ুয়ার কথায়, এটা হয় নাকি? অধিকাংশ দিন রাতের ডিউটি করতে হয়, সরকার কি কখনও এটা বলতে পারে? 


এক অ্যাপ ক্যাব মহিলা চালকের কথায়, 'এটা কি আদৌ কোনও সমাধান হতে পারে? আমরা কি ঘরে বসে থাকব, যাঁকে হারালাম সে তো হাসপাতালের ঘরেই ছিল। তাঁরও তো এরকম হল।' এই একই প্রশ্ন এক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরও। প্রায়সময়ই তাঁকে নাইট শিফট করতে হয়। তিনি বলেন, 'ওটা তো ওদের ব্যর্থতা। ব্যর্থতা ঢাকতে বলছে। এখন তো সরকারিতে চাকরি নেই। রাতের ডিউটি করব না তো কী করব?'   


আরও পড়ুন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নেওয়ার আগে নিজের লক্ষ্মী সুরক্ষিত কিনা ভাবুন’, বললেন নির্যাতিতার মা


ছেলে হোক কিংবা মেয়ে...যখন খুশি বেরোবে, যেখানে খুশি যাবে। তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে প্রশাসন। এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম। তার পরিবর্তে রাতে মেয়েদের ঘরে ঢুকিয়ে রাখা কি কোনও সমাধান সূত্র হতে পারে না কি? এটা কখনও হয় নাকি? প্রশ্ন সকলেরই। 


কী জানান হয়েছিল নির্দেশিকায়? 


মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাসম্ভব নাইট ডিউটি না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। জোড়ায় জোড়ায় কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজগুলির কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে যাতে এমনভাবে কাজের সূচি তৈরি করা হয় যাতে মহিলারা জোড়ায় জোড়ায় বা দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে এবং নাইট শিফ্টের সময় একে ওপরের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারে। 


এমনকী কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তায় জোর দিতে 'রাতের সাথী' প্রকল্প এনেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।


আর জি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে রাতের দখল নিয়েছিল মেয়েরাই। রাজ্যের বুকে কয়েকশো গুণ হয়ে জ্বলে উঠেছিল সেই প্রতিরোধের আগুন। স্বাধীনতার মধ্যরাতে ডাক উঠেছিল নারী স্বাধীনতার। জনপ্লাবন বললেও যেন কম বলা হয়। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, সঙ্গে স্লোগান কাঁপিয়ে দিয়েছিল মধ্যরাতের নির্জনতাকে। লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী মেয়ের জমায়েত বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল। সেই প্রতিবাদকে তবে কি ছোট করা হল এই নির্দেশের মাধ্যমে, এ প্রশ্নই তুলছেন মেয়েরা এখন। 



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে