কলকাতা: সাগরদিঘির (Sagardighi) ভোটে ধাক্কা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নিশানায় অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অধীর চৌধুরীকে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেন,  'আরএসএস-সিপিএমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে সাগরদিঘির ভোট করেছেন অধীর চৌধুরী। এই যে কংগ্রেসের নেতারা বড় বড় কথা বলেন, তিনি বিজেপির এক নম্বর লোক। 'সাগরদিঘিতে অনৈতিক লড়াই করেছে। লোকটা কার? বিজেপির, প্রার্থী কংগ্রেসের, সমর্থন দিল সিপিএম'।


একযোগে আক্রমণে মমতা: বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুল গাঁধীকে নিশানা করে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাহুল গাঁধী যতদিন থাকবেন, মোদিকে কেউ খারাপ ভাববে না। সেজন্য রাহুলকে নেতা বানানোর চেষ্টা বিজেপির। আমি দিল্লিতে তোমার সঙ্গে দোস্তি করব, আর এখানে তুমি বিজেপির সঙ্গে মস্তি করবে!' আমি বিজেপির কাছে মাথানত করিনি, মাথানত করেছে কংগ্রেস, আক্রমণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


সাগরদিঘিতে টাকার খেলা? টাকার খেলা হয়েছে সাগরদিঘিতে। উপনির্বাচনে হার নিয়ে বিরোধীদের একজোটে আক্রমণ করে, এবার এই মন্তব্য করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। RSS-এর সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তুলে, তীব্র আক্রমণ করলেন অধীর চৌধুরীকে। পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। 


৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোটের কাছে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে! যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গেছে! এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবারই কালীঘাটের বৈঠকে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবিবার ফোনে মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে, বিস্ফোরক দাবি করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করলেন, সাগরদিঘিতে টাকার খেলা হয়েছে। সেখানকার মানুষকে নানাভাবে ভুল বোঝানো হয়েছে।  সেই সঙ্গে আরও একবার মমতা জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ভোটে, কারা টিকিট পাবে তা তিনিই ঠিক করবেন। এর আগে, সাগরদিঘিতে হার নিয়ে নবান্ন থেকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এখানে ইমমোরাল জোট হয়েছে। তীব্র নিন্দা করছি। যদি বিজেপির ভোট শতাংশ দেখেন, ২২ শতাংশ। এবার তাঁদের ভোট কংগ্রেসে পড়েছে, প্রায় ১৩ শতাংশ। সুতরাং তাদের ভোট কংগ্রেসে গেছে। সিপিএম-কংগ্রেস জোট বেঁধেছে, সেই সঙ্গে বিজেপির ভোটও কংগ্রেসে গেছে। রবিবার কালীঘাট থেকে ফোনে মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে সাগরদিঘির হারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,সাগরদিঘির লড়াই ছিল অনৈতিক। কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি পরিকল্পিতভাবে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমরাই বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছি। বিজেপির কাছে কোনওদিন মাথা নত করব না। 


এ দিন ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, কংগ্রেসের যিনি বড় বড় কথা বলছেন, তিনি হলেন (অধীর) বিজেপির এক নম্বর লোক। এরপর আরও একধাপ এগিয়ে তৃণমূল নেত্রী মন্তব্য করেন, অধীর চৌধুরী আরএসএস-কে সঙ্গে নিয়ে, সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। দিল্লিতে তোমার সঙ্গে দস্তি করব, আর তুমি এখানে বিজেপির সঙ্গে মস্তি করবে, এটা চলতে পারে না।


বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ: অন্যদিকে অধীর চৌধুরীর পাল্টা মন্তব্য, ' খোকাবাবু ও পরিবার বাঁচাতে মমতা বন্দোপাধ্যায় বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। ইডি সিবিআই থেকে খোকাবাবু কে বাঁচাতে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরি করতে বাধা দিচ্ছেন। দেশে ৩৭% ভোট বিজেপির বিরোধীদের ৬২-৬৩%। ২০% কংগ্রেস সেখানে তৃণমূল ৪ শতাংশ। বিজেপি ও মোদির সুবিধে করতে বরাবর বিরোধী জোটে বাধা মমতার।


বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলছেন, আমরা দেখেছি যে কৌস্তব তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন বলে, সনিয়া গান্ধী তাঁকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল সিপিএম সব একই পথের পথিক।


৬৮ শতাংশ সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার, রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, সংখ্য়ালঘু ভোটাররা কি তাহলে তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন? এই প্রেক্ষাপটে, এদিন তৃণমূল নেত্রী বলেন, তৃণমূল সর্বধর্ম সমন্বয়ের পক্ষে। সংখ্যালঘুরা যেহেতু তৃণমূলকে ভালবাসে, তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে নানাভাবে। সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন - CAA, NRC এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড, তাঁরা কার্যকর হতে দেবেন না।


পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে এদিন, মুর্শিদাবাদে ৩ জনের কমিটি গড়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। কমিটিতে থাকছেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবুতাহের খান, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন।


এদিকে শনিবারের পর রবিবারও, মুর্শিদাবাদে তৃণমূল ও বিজেপিতে বড় ভাঙন ধরাল কংগ্রেস। জলঙ্গি, লালবাগ, ডোমকল , রেজিনগরের এক হাজার তৃণমূল কর্মী কংগ্রেসে যোগ দিলেন। একই পথে হেঁটেছেন বিজেপি সমর্থিত ৫০টি পরিবারের সদস্যরাও।