কলকাতা: মাত্র দিন বারোর তফাত। তার মধ্যেই তিন তিনজনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। প্রত্যেকেই পেশায় মডেল ও অভিনেত্রী। গত ১৫ মে নিজের ফ্ল্যাট থেকে দেহ মেলে টেলি অভিনেত্রী পল্লবী দের (Pallabi Dey)। এর ঠিক দশ দিনের মাথায় দেহ মেলে মডেল - অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের (Bidisha Dey Majumder)। তার মাত্র দুই দিন পরেই ঘর থেকে দেহ উদ্ধার হয় বিদিশার বান্ধবী মঞ্জুষা নিয়োগীর (Manjusha Neogi)। গ্ল্যামার জগতে (Glamour World) এমন একের পর এক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।


১৫ মে পল্লবী দের দেহ উদ্ধার


বাংলা টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় মুখ পল্লবী দে। কাজ করেছিলেন একাধিক ধারাবাহিকে। 'আমি সিরাজের বেগম' ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া 'কুঞ্জছায়া', 'মন মানে না' নামেও দুই ধারাবাহিকে দেখা যেত তাঁকে। গত ১৫ মে গড়ফার ফ্ল্য়াট থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। তদন্তে একের পর এক তথ্য উঠে আসে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পরে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সম্পর্কের টানাপোড়েন না কাজের সমস্যা থেকে অবসাদ? পল্লবীর মৃত্যুতে ওঠে অজস্র প্রশ্ন। গতকাল সাগ্নিকের জামিনের আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়। যদিও সাগ্নিকের আইনজীবীর দাবি পল্লবী দের ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি আত্মহত্যাই করেছেন।


২৫ মে বিদিশা দে মজুমদারের দেহ উদ্ধার


পল্লবীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঠিক দিন দশেকের মাথায় নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে মডেল অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পল্লবী দের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খবর পোস্ট করে বিদিশা লেখেন, 'মানে কী এসব, মেনে নিতে পারলাম না।' বন্ধুরা বলছেন, কাজের সূত্রে পরিচয় ছিল পল্লবী-বিদিশার। গ্ল্যামারের জগতে দু’জনের উত্থান ছিল রকেট গতিতে। মাত্র ৪ বছর আগে মডেলিংয়ে আসা বিদিশা, বেশ নাম করেছিলেন বলেই জানাচ্ছে তাঁর সহকর্মীদের। বিদিশার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে আর্থিক অনটনের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের যে প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে জানা গিয়েছে, গলায় ফাঁস লাগার কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। তাই মনে করা হচ্ছে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।


২৭ মে মঞ্জুষা নিয়োগীর দেহ উদ্ধার


আজ সকালে পাটুলির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিদিশার বন্ধু অভিনেত্রী-মডেল মঞ্জুষা নিয়োগীর ঝুলন্ত মৃতদেহ। বাড়ির লোকের দাবি, বিদিশার মৃত্যুতে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন মেয়ে। গ্ল্যামার জগতে থাকার সূত্রেই বিদিশার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল মঞ্জুষার। তাঁর মৃত্যু তদন্তে মিলেছে নয়া তথ্য। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে মঞ্জুষার বাড়িতে আসেন তাঁর স্বামী। দু'জনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। তাঁর স্বামীকে পাটুলি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 


আরও পড়ুন: Nargis Fakhri Video: পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোর বার্তা নার্গিস ফাকরির, শেয়ার করলেন মজার ভিডিও


একের পর এক মডেল-অভিনেত্রীর মৃত্যুতে বারবার অবসাদ ও সেই থেকে আত্মহননের প্রসঙ্গ উঠছে। কী বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী মিত্রর পরামর্শ, 'সময়ে চিকিত্সা করান, দরকারে ওষুধ খান, কাটবে ডিপ্রেশন। পরিবারের লোকেরা এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, পাশে থাকুন।' 


অন্যদিকে সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্রের মতে, 'মানুষ একা হয়ে যাচ্ছে। এর দায় সমাজেরও। গ্ল্যামার নয়, চাকরি নেই, সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে হতাশা।'