সৌমেন চক্রবর্তী, মেদিনীপুর : মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য় সরকারের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, আর জি কর হাসপাতাল ছাড়া, অন্য সব হাসপাতালে সুরক্ষা সংক্রান্ত কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সত্য়িই কি তাই ? মেদিনীপুর মেডিক্য়ালে গিয়ে দেখা গেল, বিশ্রাম কক্ষ তো দূরস্ত, ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গেই থাকতে হয় চিকিৎসকদের। দুর্গন্ধ, অপরিষ্কার শৌচাগারের পাশেই ডাক্তারদের অন কল রুম।
আশপাশে মুমূর্ষু রোগী...তারমধ্য়ে মশারি টাঙিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তার। পুরুষ রোগীদের শৌচাগার, দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্ন। তার ঠিক পাশেই ডাক্তারদের অন কল রুম।
জুনিয়র ডাক্তারদের যে ১০ দফা দাবি, তার মধ্য়ে অন্য়তম সমস্ত মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের রেস্টরুম ও অনকল রুম রাখতে হবে। চিকিৎসকদের জন্য় পৃথক শৌচাগারের ব্য়বস্থা করতে হবে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য় সরকারের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী দাবি করেছিলেন, আর জি কর হাসপাতাল ব্য়তীত অন্য সব হাসপাতালে সুরক্ষা সংক্রান্ত কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই টাটকা ছবিগুলো মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজ-হাসপাতালের। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, রেস্ট রুম তো দূরের কথা... ডেঙ্গি ওয়ার্ডে, মশারির মধ্য়েই বিশ্রাম নিতে হয় ২৪ ঘণ্টা ডিউটিরত, চিকিৎসককে।
এ প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজের পোস্ট গ্র্য়াজুয়েট ট্রেনি সঞ্জয় বর্মন বলেন , "আমরা এখানে ২৪ ঘণ্টা কাজ করি। হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগী, বা মুর্মুর্ষু রোগীরা এখানে আসে। এখানে মেন সমস্য়া, ডাক্তারদের কোনও অন কল রুম নেই। পেশেন্টদের মাঝেই একটা বেডে আমি রয়েছি। ওদেরই একটা বেড অনকল ডাক্তারের জন্য থাকে। ৪০-৫০জন ডেঙ্গি পেশেন্টের মধ্য়েই অনকল ডাক্তারকে ২৫ ঘণ্টা থাকতে হয়।"
একই অবস্থা অবজার্ভেশন ওয়ার্ডেরও। অপারেশনের পর, যেখানে এনে রাখা হয় রোগীদের, সেই একই ঘরে, রোগীর জন্য় বরাদ্দ বেডে, বিশ্রাম নিতে হয় চিকিৎসকদের।
মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার সুধা বলেন , "আমরা রেস্টরুম পাইনি। এই যে ৪টে বেড, আমরা এখানে ঘুমাই। ট্রমা পেশেন্ট আসে এখানে। পাশেই দেখছেন ট্রিটমেন্ট চলছে। এখানে বেডশিটও চেঞ্জ হয় না। আমরা এখানেই ঘুমোই। যখন সময় পাই রেস্ট করি। ওপরে কোনও রেনোভেশন হয়নি।"
অনডিউটি ডাক্তারদের জন্য় বেশ কয়েকটি রুম রয়েছে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, সেগুলো সবসময় বন্ধ অবস্থাতেই থাকে। সব থেকে দূরাবস্থা, সার্জারির ডক্টর অন কল রুমের। এর ঠিক পাশেই পুরুষ রোগীদের শৌচাগার। অপরিচ্ছন্ন... দুর্গন্ধ... যেখানে ঢোকাই দায়।
মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজের অপর এক জুনিয়র ডাক্তার মোহর দাশগুপ্ত বলেন , "অনকল রুমটা করা হয়েছে করিডর থেকে। সেই করিডরে রোগী রয়েছে। রাতে অগুণিত রোগী থাকে। মদ্যপ থাকে কেউ কেউ। কোনও নিরাপত্তারক্ষী দেখতে পাওয়া যাবে না। এই অনকল রুমে মহিলা ডাক্তার হয়ে থাকাটা কি আমার জন্য সেফ ? আমার তো মনে হয়, পুরুষদের জন্যও সেফ নয়। কারণ, মদ্যপ অবস্থায় কেউ মারতে এলে একজন মেলও কিছু করতে পারবেন না।"
যদিও এই পরিস্থিতি নিয়েে কোনও মন্তব্য় করতে চাননি মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজের সুপার জয়ন্ত রাউত।