অলোক সাঁতরা, পশ্চিম মেদিনীপুর: তান্ত্রিকের (Tantril) বেশে শ্মশানে (Crematorium) গিয়ে নানারকম কেরামতি। লোকজন ভাড়া করে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি। তার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা আপলোড। ভাইরাল হওয়ার আশায় একেবারে ছক কষেই এগিয়েছিলেন। কিন্তু 'বিগ বস' থেকে ডাক পাওয়ার বদলে থানায় যেতে হল এক দল যুবককে।  তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যে ক'টি ভিডিও আপলোড করে তুলেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, মুছে দেওয়া হয়েছে তা-ও। 


ভাইরাল হতে গিয়ে পুলিশের হাতে


মেদিনীপুর (Medinipur News) শহরের মহাতাবপুরের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে মধ্যরাতে পদ্মাবতী শ্বশানে হাজির হয় যুবকদের ওই দল। তান্ত্রিক পরিচয় দিয়ে শ্মশানে ঢোকে। তার পর তন্ত্রসাধনার নামে চিতার কয়লা, মৃতদেহের অবশিষ্ট হাড় চিবিয়ে, ভাঙা হাঁড়ি থেকে জল খেয়ে তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে। মুখে কয়লার কালি মেখে, ফুলের মালা পায়ে করে ছুড়ে চলতে থাকে উৎপাত। তান্ত্রিক সাজিয়ে মূলত একজনকে নামানো হয়। বাকিরা নিযুক্ত ছিলেন সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি এবং জিনিসপত্র এগিয়ে দেওয়ার কাজে।


এক মহিলাকে দাহ করার খবর পেয়েই শ্মশানে তান্ত্রিকের তন্ত্রসাধনায় আগমন বলে ভিডিওয় জানানো হয়। পুলিশের অনুমান, ওই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে ভাইরাল হওয়াই ছিল ওই দলের লক্ষ্য। সেই তো ভিডিওটি তারা ভিডিওটি তুলেও ফেলে সোশ্যাল মিডিয়া। রাতেই সেটি আপলোড করা হয়। সকাল হতে হতে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়েও পড়ে। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee on CPM: 'বামফ্রন্ট ৩৪ বছর ধরে নরকঙ্কালের মালা পরিয়েছে', ফের মমতার নিশানায় বাম


তাতেই বিষয়টি নজরে আসে পুলিশের, যা দেখে কার্যত শিউড়ে ওঠেন সকলেই। এর পরই ওই চার যুবকের খোঁজে নামে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এদিক ওদিক খবর নিয়ে অবশেষে চারজনকে চিহ্নিত করে আটক করা হয়। আটক চার যুবক নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। তার পর ফেসবুক থেকে ভিডিওটি ডিলিট করায় পুলিশ। 


জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে ওই দল জানিয়েছে, নিছক মজা করার জন্যই চার বন্ধু মাঝরাতে মহাতাবপুর পদ্মাবতী শ্মশানে যান। সেখানে এক জনকে তান্ত্রিক সাজিয়ে অঙ্গভঙ্গি করতে বলেন। অন্যরা তা উপভোগ করার পাশাপশি, সমস্ত ঘটনা মোবাইলবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। তবে নিছক মজা করাই উদ্দেশ্য ছিল, নাকি এর পিছনে অন্য কিছু কারণ ছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।


শ্মশান সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত


এই বিষয়ে বিজেপি-র জেলা সহ সভাপতি অরুপ দাস বলেন, "রাতে মেদিনীপুর শহর সুরক্ষিত নয়। প্রশাসনের নজরদারির অভাবের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি, যাতে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে পুলিশি প্রহরা বাড়ানো হয়,পাশাপাশি সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়।"


এই ঘটনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুর পৌরসভার প্রধান সৌমেন খাঁ বলেন, "খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পুলিশকে বলার পর পরের দিনই ছেলে গুলিকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়। শ্মশানে ২৪ ঘণ্টা লোক থাকে। এখন সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটলে তা কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"