কলকাতা: বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বার বার বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বঞ্চনার অভিযোগ খারিজ করলেও, পাল্টা তাঁকে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জ জানান দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি পরাজিত হওয়ার পর থেকে, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলার প্রাপ্য টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এবার তৃণমূলের হাতিয়ার হল কেন্দ্রেরই একটি রিপোর্ট, যেখানে ১০০ দিনের কাজের টাকা প্রাপক হিসেবে বাংলার উল্লেখই নেই। (MGNREGS funds to West Bengal)


গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি করতে কোন রাজ্যকে ১০০ দিনে কাজের কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। রিপোর্টে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাওয়ার রাজ্য হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কেরল, মিজোরাম, তামিলনাড়ু, সিকিম, লাদাখ, পুদুচ্চেরী, হিমাচলপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, তেলঙ্গানা, জম্মু ও কাশ্মীর, কর্নাটক, মেঘালয়, পঞ্জাব, ওড়িশা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, অসম, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের। কিন্তু টাকা প্রাপকের তালিকায় নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের। (Nirmala Sitharaman)


ওই রিপোর্টের নীচে লেখা রয়েছে, যে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত এলাকাকে ২০২৪ অর্থবর্ষে টাকা দেওয়া হয়নি বা টাকার পরিমাণ নগণ্য, সেগুলির উল্লেখ নেই।  মণিপুর, লাক্ষাদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দমন দিউ ও দাদরা নগর হাভেলি এবং গোয়ার সঙ্গে সেখানে পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গও টাকা পায়নি।  



ওই রিপোর্টটিকে হাতিয়ার করেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নতুন করে বঞ্চনার অভিযোগে সরব হলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বুধবার কলকাতায় সেই নিয়ে সাংবাদিত বৈঠক করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কুণাল ঘোষ। সেখানে চন্দ্রিমা বলেন, "রাজ্যের তরফে, তৃণমূলের তরফে বার বার বাংলাকে বঞ্চনার করা হচ্ছে বলে সরব হয়েছি আমরা। বাংলার মানুষকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয় না, আবাস যোজনার টাকা দেওয়া হয় না, বিভিন্ন খাতে যে টাকা প্রাপ্য, কিছুই দেয় না কেন্দ্র। ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা পাওনা আমাদের। দিল্লির দরবারে হাজিরও হয়েছি আমরা। কিন্তু কী ব্যবহার করা হয় দেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও শামিল হন। কিন্তু তার পরও টাকা আসেনি। ২০২১ সালের পর থেকে কোন খাতে, কত টাকা দিয়েছে কেন্দ্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শ্বেতপত্র দাবি করেছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে নির্মলা সীতারামন বলেছেন হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন। তাহলে তো হিসেব থাকবে ওঁর কাছে! কোন বছর, কত টাকা দিয়েছেন, সেই হিসেব তাহলে পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! কিন্তু শ্বেতপত্র দেওয়ার পথে হাঁটলেন না উনি। হাঁটতে পারবেনও না। কার টাকা দেওয়া হয়নি।"


কেন্দ্রের রিপোর্ট নিয়ে চন্দ্রিমা জানান, এই নথি রাজ্য সরকার প্রকাশ করেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট, যাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়নি। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য় নেই বলেও অভিযোগ তোলেন চন্দ্রিমা। তাঁর দাবি, গ্রামীণ মানুষের সংখ্যা কোথায় বেশি, সেই নিরিখে মজুরি বা বরাদ্দ নেই। বাংলাকে বাদ দিয়েছে কেন্দ্র। শ্বেতপত্রও দিতে পারছে না। কিন্তু কেন্দ্রের রিপোর্টেই স্পষ্ট যে বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়নি। চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, নীতি আয়োগের বৈঠকে বঞ্চনার কথা বলতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করে কেন্দ্র। কিন্তু জোর করে টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, বাংলার প্রাপ্য টাকা, ভাগের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। 


চন্দ্রিমা এদিন জানান, টাকা না দিয়েও মানুষকে বিভ্রান্ত করছে কেন্দ্র। কিন্তু সত্যকে চাপা দেওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মুখে বলা হলেও, বাংলাকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রের সরকার সংবিধানের কণ্ঠরোধ করছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর মতে, যে রাজনৈতিক দলই থাকুক না কেন রাজ্যে, মানুষ তো সকলের! তাহলে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, প্রশ্ন তোলেন চন্দ্রিমা। একই সুর শোনা যায় কুণালের গলায়। তাঁর প্রশ্ন, বাংলা থেকে কর তুলে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। সেখান থেকে বাংলার পাওয়না কেন মেটানো হবে না? বাংলার হকের টাকা রাজনৈতিক কারণে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।