সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষী নিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা  প্রতি বছর নিজের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙছে। ২০২২ সালে পরিযায়ী  পাখির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯,৩৯৩। গতবছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ছিল ৯৮,৭৩৯। প্রতি বছর পাখির সংখ্যা বাড়ায় খুশী পশু প্রেমী সংগঠন।



রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষী নিবাসে প্রতিবছর মে জুন মাসে পরিযায়ী পাখিরা বাসা বাধে। এই পক্ষীনিবাসে ওপেন বিল ষ্টর্ক, নাইট হোরেন, ইগ্রেট এবং কর্মরেন্ট মূলত এই চার ধরনের পরিযায়ী পাখি বাসা বাধে। এই পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখিরা বংশ বিস্তারের পর তারা এই বাসস্থান ছেড়ে চলে যায়। রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষী নিবাসের পাশে দিয়ে বয়ে গেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির শব্দে পরিযায়ী পাখিদের যাতে সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয় তার জন্য রায়গঞ্জ কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ প্রয়াত প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সি এই জাতীয় সড়ককে ঘুরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। 


রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও এই কুলিক পক্ষী নিবাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এশিয়ার সর্ববৃহৎ পক্ষী নিবাস হওয়া সত্বেও দীর্ঘদিন এই পক্ষীনিবাসে কোন রকম ঘুরে দেখার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। বিশাল আকৃতির পক্ষীনিবাস খোলা থাকায় পরিযায়ী পাখিদের চোরা শিকারীদের আক্রমনে পড়তে হত। চোরা শিকারীদের হাত থেকে পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে রাজ্য বনদফতর কুলিক পক্ষী নিবাসকে ঘিরে দেওয়া হয়।             


আরও পড়ুন, হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা, দীপাবলির আগে রাজ্যে বাড়ছে উদ্বেগ


পরিযায়ীদের রক্ষা করতে পক্ষী নিবাসের সংলগ্ন বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়। রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষী নিবাসে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি বাসা বাধে। এই বিপুল পরিমাণ পাখির যথেষ্ট খাবার না থাকার কারণে পাখিদের খাবারের খোঁজে অন্যত্র বেরিয়ে যেতে হত। সেখানেও চোরা শিকারীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হত। রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষী নিবাসের ভেতরে দিয়ে বয়ে গেছে কুলিক লেক। পরিযায়ী পাখিদের জন্য বন দফতরের সেখানে তাদের খাবার মাছ সহ বিভিন্ন কীট প্রতঙ্গ ছাড়ে। 


কুলিক পক্ষী নিবাসে পাখিদের নিরাপত্তা এবং পাখিদের যথেষ্ট খাবারের ব্যবস্থা থাকায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙছে। প্রতিবছর যে পরিমান পরিযায়ী পাখি আসছে কুলিক পক্ষি নিবাসে তাদের থাকার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পক্ষী নিবাস ছেড়ে ইগ্রেট,কর্মরেন্ট এবং নাইট হেরোনের মত পাখিদের রায়গঞ্জ শহরের গাছ গুলিতে বাসা বাধতে বাধ্য হয়। 


রায়গঞ্জ শহরেই এই তিন ধরনের পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ২৭৮৮।  কুলিক পক্ষী নিবাসে পাখির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৯৩৯৩।  যার মধ্যে ওপেন বিল ষ্টর্ক ৬৪০৫৫, নাইট হেরোন ৮৯৬৯, ইগ্রেট  ১৯৮৪১ এবং কর্মরেন্টের সংখ্যা  দাঁড়িয়েছে ৬৫২৮।  গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৮৭৪৮। পরিযায়ী পাখির প্রতিবছর নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙায় খুশী পশু প্রেমী সংগঠন। উত্তর দিনাজপুর পিউপলস ফর এনিমেলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া দাবি করেছেন বনদফতর, রায়গঞ্জের সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এই সাফল্য এসেছে। রেকর্ড পরিমাণ পাখি কুলিক পক্ষী নিবাসে আসায় তারা খুশী। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকরা অনেক বেশী আকর্ষিত হবেন।