সুনীত হালদার, সাঁতরাগাছি: ডিসেম্বর মাস কার্যত শেষ হতে চলল। শীতের আমেজ রয়েছে গোটা রাজ্যেই। অথচ সাঁতরাগাছি ঝিলে (Santragachi Jheel) সেভাবে দেখা নেই পরিযায়ী পাখির!

Continues below advertisement

শীত পড়লেও এ বছর সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম। এই বছর দেরিতে ঝিল পরিষ্কারের কাজ শুরু হওয়ায় এই পরিস্থিতি। পাখি প্রেমিকদের আশা, কাজ শেষ হলে কিছুদিনের মধ্যেই ঝিল ভরে উঠতে পারে রকমারি পাখির কলতানে।

প্রতিবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাঁতরাগাছি স্টেশন লাগোয়া ঝিলে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু হয়। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঝিলে পাখির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঝিল দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়াই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবেশ দূষণ।

Continues below advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অন্যান্য বছর নভেম্বরের শুরুতেই যখন শীতের আমেজ পড়তে শুরু করে তখন থেকে ‘ঝিলের অতিথিরা’ আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর কয়েক দফায় পাখির দল এলেও তারা আশেপাশে চক্কর দিয়ে অন্যত্র উড়ে চলে গিয়েছে। কারণ ঝিলের পুরোটাই কচুরিপানায় ঢাকা ছিল। পাখিদের বসার মত নিরাপদ জায়গা ছিল না। ঝিলের এই বেহাল দশা দেখে অবশেষে হাত বাড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নেচারমেটস নেচার ক্লাব’। সংস্থার সদস্যরা গত ১৫ দিন ধরে ঝিল পরিষ্কার, কচুরিপানা অপসারণ এবং পাখিদের বসার জন্য ভাসমান দ্বীপ তৈরির কাজ করছেন।

এদিন সকালে ঝিলে গিয়ে দেখা যায় মাঝখানের জলাশয় পরিষ্কারের কাজ জোর কদমে চলছে। কর্মীরা কচুরিপানা কেটে জমা করছেন এবং সেই পানা দিয়েই তৈরি হচ্ছে একাধিক ভাসমান দ্বীপ। তাতেই বসবে দেশ-বিদেশের পরিযায়ী পাখিরা। সংস্থার পক্ষ থেকে লীনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অন্যান্য বছর এই সময়ে যে পরিমাণ পাখি দেখা যায় এই বছর তার অনেকটাই কম। সরকারি ওয়ার্ক অর্ডার পেতে দেরি হওয়ায় আমরাও দেরিতে কাজ শুরু করেছি। এর ফলে পাখির আনাগোনা কমেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আরও যেসব প্রজাতির পাখি আসে, তারা যাতে নিরাপদ আশ্রয় পায় সেই লক্ষ্যেই দ্রুত দ্বীপ তৈরি করছি।”

তিনি আরও বলেন, রাজ্য জীববৈচিত্র্য বোর্ডের সহযোগিতা নিয়েই তারা এই কাজ এগিয়ে চলেছেন। তবে দেরিতে হলেও ঝিল পরিষ্কারের এই উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা ও পাখি প্রেমীরা। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ পাখি এসেছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “অনেক বছর ধরে আমরা দেখছি পরিযায়ী পাখিদের ভিড়ে মুখর থাকে সাঁতরাগাছি ঝিল। কিন্তু এ বছর ভরা কচুরিপানার কারণে পাখি বসতে পারেনি। এখন যেভাবে পরিষ্কার হচ্ছে, আশা করি আবার পুরনো দিনের মতো ঝিল ভরে উঠবে বিদেশি পাখিতে।”আরেক বাসিন্দা বলেন, “ঝিল পরিষ্কার দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে এটাই বড় কথা। যদি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, তাহলে সাঁতরাগাছি ঝিল আবার সত্যিকারের পাখিরালয় হয়ে উঠবে।”

পরিবেশবিদদের মতে, সাঁতরাগাছি ঝিল শুধু হাওড়া নয়,  সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল। প্রতিবছর শীতকালে সাইবেরিয়া, রাশিয়া এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দল বেঁধে এখানে আসে। সাধারণত মার্চ মাস পর্যন্ত থেকে তারা আবার ঘরে ফিরে যায়। প্রকৃতি সংসদের পাখি গণনার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৫ বছর এই ঝিলে গড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার পাখি এসেছিল।

রাজ্য জীব বৈচিত্র্য বোর্ডের উদ্যোগে ঝিলে আবার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে, পাখিদের ভিড় বাড়বে বলে আশাবাদী সকলেই। পাখি প্রেমিকদের আশা শীতের বাকি দিনগুলোতে পাখির কলতানে ভরে উঠবে সাঁতরাগাছি ঝিল।