ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: পৈতৃক ভিটে নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টানাপোড়েন। আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে জমি-জট। সেই আবহে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) পাশে দাঁড়াল শিক্ষাজগৎ। দেশ-বিদেশের ৩০২ অধ্যাপকের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি গেল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (Droupadi Murmu) কাছে। তাতে বিশ্বভরতীয় উপচার্য (Visva Bharati) বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (bidyut Chakraborty) অমর্ত্যকে হেনস্থা করছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অযৌক্তিক আক্রমণ থেকে শিক্ষাকেন্দ্রের অখণ্ডতা রক্ষা এবং নাগরিকের রক্ষা জরুরি বলে চিঠিতে জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। দ্রুত এ ব্যাপরে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। চিঠিতে সই রয়েছে আর এক নোবেল বিজয়ী জর্জ ই একারলফেরও। 


চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী একাধিক নির্দয় ঘটনার জন্য দায়ী। বেআইনি ভাবে পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের সাসপেন্ড করা থেকে বেআইনি ভাবে ফ্যাকাল্টি সদস্য,আধিকারিক এবং অন্য কর্মীদের চাকরি কেড়ে নেওয়া,  বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, যেনতেন প্রকারে বিরুদ্ধমত দমন করা, যখন তখন, যে কাউকে শোকজ করা, চার্জশিট দেওয়ার মতো ঘটনার জন্য দায়ী। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলেই কলকাত হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিশ্বভারতীকে নিয়ে অগণিত মামলা জমা পড়েছে’।


বিদ্যুৎকে নিশানা করে শিক্ষাবিদরা আরও লেখেন, ‘ওঁর সাম্প্রতিকতম টার্গেট হলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। অমর্ত্যর ঠাকুরদা থেকে মা-বাবা প্রথম এশীয় নোবেলজয়ী তথা বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা এবং উন্নয়নকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৯৯ সলে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারত রত্ন পেয়েছিলেন অমর্ত্য। তাঁর বিরুদ্ধেই ইদানীং কালে অশালীন ভাষায় একাধিক চিঠি জারি করা হয়েছে। কোনও প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হচ্ছে, অমর্ত্য বেআইনি ভাবে বিশ্বভারতীর জমি দখল করেছেন। বলা হচ্ছে, ১.২৫ একরের ইজারা নেওয়া হলেও, আদতে ১.৩৮ একর জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য। অর্থাৎ ০.১৩বা ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। যদিও বিশ্বভারতীর তরফে অমর্ত্যর বিরুদ্ধে জারি চিঠির সঙ্গে যে নথি এসেছে, তাতে অমর্ত্যের বাব আশুতোষ সেন ১.৩৮ একর জমি আইনি পদ্ধতিতেই রেকর্ড করিয়েছিলেন বলে দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি ওই পরিমাণ জমিই পশ্চিমবঙ্গ সরকার অমর্ত্যর নামে মিউটেশন করে দিয়েছে’।


আরও পড়ুন: Viral News: ইঁদুর দৌড়ে আগ্রহ নেই একবিন্দু, মাধ্যমিকে ৩৫ শতাংশ নম্বর ছেলের, সাফল্য উদযাপন মা-বাবার


শুধু তাই নয়, তথ্য জানার অধিকার আইনে সম্প্রতি এক আবেদনকারীকে বিশ্বভারতীর তরফে যে জবাব দেওয়া হয়েছে, তার সঙঅগেও অভিযোগের মিল নেই বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। লেখা হয়েছে, ‘অমর্ত্য জানিয়েছেন, ইজারার জমি ছাড়াও বাড়তি কিছু জমি কিনে নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ১৭ ফেব্রুয়ারি তথ্য জানার অধিকার আইনে নীলকণ্ঠ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি আবেদন জানালে, তাঁকে নথির আসল প্রতিলিপি দেয়নি বিশ্বভারতী। বরং ডেকে পাঠিয়ে একটি প্রতিলিপি চোখের দেখা দেখতে দেয়। আসল নথি নেই তাদের কাছে বলেও জানায়। ওই প্রতিলিপির ৫ নম্বর পাতার নীচে ১.২৫ একর জমির উল্লেখ ছিল, যা ইজারা নেওয়া হয়, কিন্তু সেই লেখার হরফ বাকি অংশের লেখার চেয়ে আলাদা ছিল। এক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়ে থাকতে পারে’।


বিশ্বভারতীর জমি জবরদখল হয়ে গিয়ে থাকলে, বিগত ৮০ বছরে তা টনক পড়ল না কেন, বিদ্যুৎ দায়িত্বে আসার পর হঠাৎ এত শোরগোল কেন, প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা।  কেন্দ্রের NDA সরকারের থেকে অমর্ত্যের আদর্শ আলাদা বলেই বিদ্যুৎ অমর্ত্যকে হেনস্থা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বিশ্বভারতী চালানোর ক্ষেত্রে নিজের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে  এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থন জোগাড় করতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে বিদ্যুৎ অমর্ত্যকে হেনস্থা করছেন বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।


অর্মত্য সেন কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জমি নিয়ে হেনস্থা করছেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি যেন ব্যবস্থা নেন এই দাবি জানিয়ে ৩০২ জন দেশ, বিদেশের অধ্যাপক সহ করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিলেন। ৩০২ জন অধ্যাপকের মধ্যে নাম রয়েছে ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অভিজিৎ চৌধুরী, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অলকা আচার্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্বিকেশ মহাপাত্র ও আব্দুল কাফি, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনিসুর রহমান খুদা বখশ, আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট হান্টসভিলের অ্যান্টনি ডি’কস্টা, বিশ্ব ভারতীর অরিন্দম চক্রবর্তী, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ণব হালদার, লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের অর্পিতা ভট্টাচার্য, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অতনু সেনগুপ্ত, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার অবনীশ কুমার, ব্রিটেনের ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির বিভাস সাহা, আমেরিকার বস্টন কলেজের চার্লস ডার্বার, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবব্রত দাশগুপ্তের। 


এ ছাড়াও সই রয়েছে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবাশিস সেনগুপ্ত, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলীপ রানা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনা পান্ডা, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার হাফিজ আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটসের জেমস কে বয়েস ও জয়তী ঘোষ, রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোৎস্না চট্টোপাধ্যায়, যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোজিৎ মণ্ডল, কানাডার ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির নিসিম মান্নাথুকারেন, আবু ধাবির ব্রাইট রাইডার্স স্কুলের নোরিন মুখিয়া, বোলপুর কলেজের অধ্যক্ষ নুরশাদ আলি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভা বসু, বিদ্যাসাগর কলেজের সঞ্জীব কুমার জানা, আইআইটি মাদ্রাজের সুভদ্রা নন্দা, পৌষমেলা বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়, ব্রিটেনের ব্রুনেই ইউনিভার্সিটির সুগত ঘোষ, ঠাকুর পরিবারের আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, আইআইএম কলকাতার সুশীল খন্না, জাপানের হিতোৎসুবাশি ইউনিভার্সিটির তাকাশি কুরোসাকি, তারকেশ্বর কলেজের তপনকুমার ঘোষ, মালদা উমেন কলেজের উমা বসাকের।