কলকাতা: বাংলার 'চাণক্য' জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মশিবিরে গিয়ে উঠেছেন বলে একসময় চাউর হয়েছিল বেশ। তার পর বিধানসভা নির্বাচন মিটতেই সপুত্র ছেলেকে নিয়ে তৃণমূলে ফিরেছিলেন মুকুল রায়। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলে স্বাগত জানিয়েছিলেন তাঁকে। শোনা গিয়েছিল 'ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে' উপমাও। কিন্তু বিগত ৪৮ ঘণ্টায় না বিজেপি, না তৃণমূল, মুকুলের ধারে কাছে দেখা যায়নি কাউকেই। তাতেই মুকুল রায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।


রহস্যজনক ভাবে আচমকা বাড়ি থেকে উধাও, তার পর কলকাতা বিমানবন্দরে দেখা দিয়ে, সটান দিল্লিতে হাজির। তার পর থেকে মুকুল রায়কে নিয়ে কার্যত ঝড় বয়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। ছেলে শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন মুকুল। অসুস্থ তিনি। ঘটেছে স্মৃতিবিভ্রম। তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে বলে অনুযোগও ধরা পড়েছে শুভ্রাংশুর গলায়।


যদিও নিজেকে একেবারে সুস্থ বলে দাবি করেছেন মুকুল। সজ্ঞানেই তিনি দিল্লি রওনা দেন বলে জানিয়েছেন। বিজেপি-তে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করতে চান বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত বিজেপি-র তরফে মুকুলের সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে দেখা যায়নি কাউকেই। বরং বাংলায় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাফ জানিয়েছেন, বিজেপি-র টিকিটে জিতে তৃণমূলের পতাকা গ্রহণ করেছেন মুকুল। তাঁর সদস্যপদ খারিজের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁরা। 


অন্য দিকে, মুকুলের থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে তৃণমূলও। দলের সাংসদ শান্তনু সেন জানিয়েছেন, বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল যে জায়গায় রয়েছে, সেখানে ক'টা মুকুল গাছে ধরল, ক'টা ঝরে পড়ল, তাতে দলের কিছু যায় আসে না। তুলনামূলক সুর নরম থাকলেও, মুকুলকে বিজেপি বিধায়ক বলে উল্লেখ করেছেন মমতাও। তাঁর বক্তব্য, "মুকুল রায় কোথায় যাবেন সেটা তাঁর নিজের ব্যাপার। মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক আছেন। তাঁর ছেলে যে অভিযোগ করছেন তার ভিত্তিতে পুলিশ ব্যবস্থা নেবেন।" যদিও মুকুলকে ভয় দেখানো হয়ে থাকতে পারে বলে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি। 


তাই মুকুল এখন কোন কূলে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে। এর আগে, মঙ্গলবার রাতে তিনি দাবি করেছিলেন, শাহ এবং নাড্ডার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে। কিন্তু বুধবার সকালে আবার জানান কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বার বার বিজেপি-তে ফিরে যেতে চান বললেও, নেতৃত্বের কারও দেখা পাননি মুকুল। তাতেই প্রশ্ন উঠছে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে।