জয়ন্ত রায়, সুদীপ্ত আচার্য ও রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘোষণা সত্বেও, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম দুই বিধায়কের। প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁই।তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য থাকায় তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।


পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম রয়েছে দুই বিধায়কের।একজন মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাস ও অন্যজন চাঁপদানির তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম গুঁই। সম্প্রতি, তৃণমূলে চালু হয়েছে এক নেতা এক পদ নীতি। কিন্তু, তারপর কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে সাত বিধায়ক ও এক সাংসদকে প্রার্থী করে রাজ্যের শাসক দল। তালিকায় ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, রত্না চট্টোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, পরেশ পালদের নাম। 


এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার, পুরভোটের প্রার্থীতালিকা ঘোষণার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুর ভোটের প্রার্থী তালিকায় নেই কোনও বিধায়ক। তিনি বলেন, কোনও বিধায়ককে প্রার্থী করা হয়নি। এক পরিবার থেকে একাধিক জনকে টিকিট নয়।


কিন্তু, তৃণমূলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অবশ্য দেখা যায়, নাম রয়েছে দুলাল দাস ও অরিন্দম গুঁইয়ের। এরপরই, শনিবার সকালে চাঁপদানির তৃণমূল বিধায়ক জানিয়ে দেন, তিনি পুরভোটে লড়াই করবেন না।


তৃণমূল বিধায়ক ও বৈদ্য়বাটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরিন্দম গুঁই বলেন,  নাম ঘোষণা মতো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফোন করেন, উনি বলেন দলীয় সিদ্ধান্ত কোনও বিধায়ক দাঁড়াবে না। দলের সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্ত। দল যদি বলে থাকে তাহলে, মেনে নেব।


প্রথম প্রার্থী তালিকায় বৈদ্যবাটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করা হয়েছিল অরিন্দম গুঁইয়ের স্ত্রী মিত্রা গুঁইকে। তবে, চুড়ান্ত তালিকায় তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, অরিন্দম গুঁইয়ের জায়গায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে পারেন তাঁর স্ত্রী।


চাঁপদানির তৃণমূল বিধায়ক পুরভোটে না লড়লেও, আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন মহেশতলার তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাস। দুলাল দাস ছাড়াও, মহেশতলা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর ছোট ছেলে সুভাশিসকে। এছাড়াও, তাঁর আত্মীয়া মণিদীপা করকে প্রার্থী করা হয়েছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে।


এর মধ্যই, সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয় মহেশতলায়। প্রার্থী পছন্দ নয়, এই দাবি করে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পর এদিন দুপুরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। লাঠিচার্জ করে পুলিশ। নামানো হয় র্যা ফ।


তৃণমূলের নতুন প্রার্থী তালিকায় আরও দেখা যাচ্ছে, উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভায় প্রার্থী করা হয়েছে, হুগলির প্রাক্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব এবং তাঁর স্ত্রীকে। কোন্নগর পুরসভায় প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূল নেতা গৌতম দাস এবং তাঁর এক আত্মীয়াকে। 


একই ছবি বীরভূমে। বোলপুর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বস্ত্রশিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের স্ত্রী কুন্তলা সিংহকে।
রামপুরহাট পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে দম্পতি সৌমেন ভগৎ এবং মীনাক্ষী ভগৎ-কে।


ঘোষণার পরও, একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্রার্থী করায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, প্রথমে বলা হল এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হবে না। তারপর বলা হল বিধায়করা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু, দেখা গেল অন্তত ২-৩ জন বিধায়ক প্রার্থী হয়ে গেলেন। আসলে যে সব বিধায়ক গুড বুকে আছেন, তাঁদের তোলাবাজি করতে দেওয়ার জন্য প্রার্থী করা হল।


তৃণমূলে ‘পরিবারতন্ত্র’ চলছে বলে  কটাক্ষ বিরোধীদের। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। পুরভোটের মুখেও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।