রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: স্বাবলম্বী হতে চাওয়ায় এক কোপে হাত কেটে নিয়েছিলেন স্বামী। রেণু খাতুনের সেই কাহিনি এখনও তাজা স্মৃতিতে। তার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের তরুণীর কাহিনি উঠে এল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসায় আপত্তি ছিল স্বামীর। কিন্তু রেণুর মতোই হার মানেননি এই পড়ুয়া। পুলিশের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষায় বসলেন তিনি। তবে শেষ মেশ যে বসতে পারলেন, তাতেই খুশি ধরছে না মনে।


ছাত্রীর পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত মনঃপুত হয়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের


মুর্শিদাবাদের (Murshidabad News) ফারাক্কার ঘটনা। আদতে তিলডাঙার বাসিন্দা ওই ছাত্রী। তিলডাঙা হাইস্কুলেরই ছাত্রী। এক বছর আগে ফারাক্কার বিন্দুগ্রাম এলাকায় বিয়ে হয়েছিল তাঁর।  মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (HS Exams)। পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু বাদ সাধে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁর পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত মনঃপুত হয়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। 


হাজার অনুনয় বিনয় করেছিলেন ওই ছাত্রী। কোনও রকমে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক, জানিয়েছিলেন আর্তি। কিন্তু মন গলেনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। স্বামী-শ্বশুর, কেউই তাঁর আর্তিতে রাজি হননি। বরং তিনি যাতে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন, তার জন্য পরীক্ষায় বসার জন্য বাধ্যতামূলক হিসেবে বিবেচিত অ্যাডমিট কার্ডও স্বামী লুকিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ। 


আরও পড়ুন: Civic Volunteers: আপাতত স্থগিত সিভিক ভলান্টিয়ারদের স্কুলে পড়ানোর সিদ্ধান্ত


এমনকি শ্বশুরবাড়িতে ওই ছাত্রীকে ঘরে তালাবন্ধ করে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। কিন্তু হার মানেননি ওই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সাত সকালে ফাঁক গলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তিনি। সটান হাজির হন ফারাক্কা থানায়। পুলিশের দ্বারস্থ হন। বাড়ির পরিস্থিতির কথা জানান। স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজন অ্যাডমিট কার্ড লুকিয়ে রেখেছেন, পরীক্ষা দিতে দিচ্ছেন না বলে অভিোযোগ করেন। এমনকি স্কুলের ব্যাগ, ইউনিফর্মও আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান। 


বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি ওই ছাত্রী


সব জানতে পেরে ওই ছাত্রীর সহায় হয় ফারাক্কা থানার পুলিশ। সটান ওই ছাত্রীর শ্বশুরবাড়িরতে হাজির হয় তারা। কিন্তু গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে তালা মেরে চম্পট দিয়েছেন ওই ছাত্রীর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেখানে পরিত্যক্ত জায়গা থেকে অ্যাডমিট কার্ড, ব্যাগ, ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়। তার পর পুলিশই ওই ছাত্রীকে নিয়ে যায় নিউ ফারাক্কা হাইস্কুলে। সেখানে পরীক্ষা  দেন তিনি। এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি তিনি।