বহরমপুর : নারকীয় হত্যাকাণ্ডের (Murder) পর এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, বহরমপুরের (Baharampur) গোরাবাজারে সেই মেস ছাড়তে শুরু করেছেন ছাত্রীরা। ভরসন্ধেয় জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরাও। এদিকে নিহত ছাত্রীর বাবার দাবি, মেয়ে জানিয়েছিল, ফোন করে ব্ল্যাকমেল করছে সুশান্ত। হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে বলেও জানায় মেয়ে।


নিহত ছাত্রীর বাবা জানান, তিনবছর আগে সুতপার সঙ্গে সুশান্তর বন্ধুত্ব হয়েছিল। পরে সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। মেয়ে জানিয়েছিল, ফোন করে ব্ল্যাকমেল করছে সুশান্ত। হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। এনিয়ে ইংরেজবাজারে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। ইংরেজবাজারের এয়ারভিউ রোডে বাড়ির উল্টোদিকেই থাকত সুশান্ত। পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। গতকাল সকাল ১১টায় মেয়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে শেষবার কথা হয়। সেইসময় মেয়ে টাকা চেয়েছিল।


গোরাবাজার। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরের অভিজাত এলাকা। ভর সন্ধেয় গলির মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক তরুণী। আর ধারালো অস্ত্র হাতে তাঁকে একের পর এক কোপ মেরে চলেছে এক যুবক। কখনও হাতে, কখনও মুখে। রক্তে ভিজে যাচ্ছে মাটি। রক্তাক্ত তরুণী তখন নিস্তেজ। তবু পা অল্প নড়ছে। আর যুবক এক হাতে ধারালো অস্ত্র। আরেক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাগে গজরাচ্ছে। কখনও কোপ মারছে। তখন গলিতে এই কাণ্ড দেখে অনেকে জড়ো হয়েছেন! কিন্তু, যুবককে ওই অবস্থায় দেখে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।


৫ জনের সঙ্গে প্রেম করে, আমাকে ফাঁসিয়ে রাখছিল। তখন এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তুমি তা বলে মারবে ? উত্তরে যুবক জানায়, মারব না মানে, আমাকে ফাঁসিতে লটকাচ্ছিল, কোথায় ছিলেন ? ওর বাবাকে এখন ফোন করছি।


ভিডিওয় দেখা যায়, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই...ছাত্রীর পিঠে পরপর দু’বার কোপ মারল যুবক, সজোরে লাথি। এরপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে, যেন কিছুই হয়নি... একেবারে নির্লিপ্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ঘাঁটতে শুরু করল।


প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই, ফের হামলা। আবারও ছাত্রীর পিঠে পরপর তিনবার ছুরি দিয়ে আঘাত করল সে। এরপর, ছাত্রীর গলা ও মুখে পর পর আরও পাঁচবার কোপ মারে অভিযুক্ত। যা দেখে শিউরে ওঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। 


হত্যাকাণ্ড চালানোর সময়, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে স্থানীয়দের ভয় দেখায় যুবক। এরপর এলাকা থেকে চম্পট দেয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তরুণীকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


মৃতার নাম সুতপা চৌধুরী। বহরমপুর গার্লস কলেজের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রীর বাড়ি মালদার ইংরেজবাজারে। বহরমপুরের এই মেসে থেকে তিনি পড়াশোনা করতেন। পদার্থবিদ্যার এই ছাত্রীর বাবা স্কুল শিক্ষক। মেসের অন্য আবাসিকদের দাবি, দুপুরে স্থানীয় শপিং মলে গেছিলেন তরুণী। সন্ধের সময়, সেখান থেকে ফিরছিলেন তিনি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তখনই তরুণীর পিছু পিছু আসছে অভিযুক্ত যুবক।
মেসে ঢোকার আগে, গেটের সামনেই তরুণীর উপর চড়াও হয় সে। এলোপাথাড়ি কোপ মারে। স্থানীয়রা বাঁচাতে এলে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায় অভিযুক্ত যুবক। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও।


রাত ১০.১৫ নাগাদ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে ধরা পড়ে যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সুশান্ত চৌধুরী। বাড়ি মালদার পুখুরিয়া থানার পীরগঞ্জে। ধৃতের কাছে খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।