ঋত্বিক প্রধান, পূর্ব মেদিনীপুর: পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবার বোমায় রক্তাক্ত শৈশব। শুকনো পাতা ঝাঁট দেওয়ার সময়, বোমা ফেটে জখম মা ও ৬ বছরের শিশু। পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলা কি বোমা-বারুদের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে? বারুদের আস্ফালনে নিরীহ শিশু-কিশোরদের আক্রান্ত হওয়া কি রুটিন ঘটনায় পরিণত হচ্ছে রাজ্যে? একের পর এক ঘটনায় এই প্রশ্ন ক্রমশ জোরাল হয়ে উঠছে।
মাথাভাঙা, মাড়গ্রাম, মানিকচক, কুলপি, মিনাখাঁ, কাঁকিনাড়ার পর এবার পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে বোমায় বিদ্ধ শৈশব। শুকনো পাতা ঝাঁট দেওয়ার সময় বোমা ফেটে জখম হল মা ও ৬ বছরের শিশু।
ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভূপতিনগরের ইটাবেড়িয়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সকাল সাতটা নাগাদ বাড়ির অদূরে রাস্তার ধার লাগোয়া জমিতে শুকনো পাতা ঝাঁটা দিচ্ছিলেন এক মহিলা। মায়ের পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করছিল তাঁর ৬ বছরের শিশুসন্তান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাতা ঝাঁট দেওয়ার সময় আচমকা বোমা বিস্ফোরণ হয়। গুরুতর জখম হয় মা ও ছেলে। তাঁদের প্রথমে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায়, সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তমলুক জেলা হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ ফজলু বলছেন, 'ও পাতা ঝাঁটাতে গিয়েছিল। রাস্তার ওপরে একদম। পাতা কুড়োতে গিয়েছিল। বোমা ফেটে মা-ব্যাটা অসুস্থ। এখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে'।
ইটাবেড়িয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই প্রথম নয়। তাঁদের এলাকায় অনেক দিন ধরেই বোমার দাপট চলছে। বোমা ফেটে আহতর আত্মীয় আয়েশা বিবির বয়ান অনুযায়ী, পাতা ঝাঁটাতে গিয়েছিল ছেলে আর মেয়ে। বোমা দেখেনি। বোমা ফেটে আহত মা আর ছেলে। আমাদের আতঙ্ক হয়ে আছে। দু-মাস আগে রাতের বেলায় রাস্তাঘাটে বোম ফাটায়। কীভাবে বাস করব?'
কে বা কারা শুকনো পাতার স্তূপে বোমা মজুত করেছিল খতিয়ে দেখছে ভূপতিনগর থানার পুলিশ। ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এ প্রসঙ্গে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের কটাক্ষ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল। প্রত্যেকটা জায়গায় বোম বন্দুকের খেলা চলছে।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তরুণ জানার কথায়, ওই এলাকা ভগবানপুর বিধানসভার অন্তর্গত, যা বিজেপির দখলে। এখানে বার বার তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা আক্রান্ত বিজেপির দ্বারা। তারা এখানে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। বোমার গর্জনে রাজ্যে শিশু-কিশোররা ধারাবাহিক ভাবে যে রকম আক্রান্ত হচ্ছে,তাতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।