সুজিত মণ্ডল, তাহেরপুর: আফগানিস্তানে কাজ করতে গিয়ে আটকে রয়েছেন নদিয়ার বহু বাসিন্দা। অগ্নিগর্ভ কাবুলের ছবি দেখে উৎকণ্ঠায় রয়েছে তাঁদের পরিবার। দ্রুত পরিজনকে দেশে ফেরানোর দাবি করেছেন তাঁরা।
আফগানিস্তান এখন তালিবানিস্তান। তালিবান শাসনে মানবতার বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে ছবির মতো সুন্দর এই দেশ। সংবাদসংস্থার দাবি, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে রবিবার থেকে এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তালিবানের গুলিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের।
এই সব দেখে আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠছে আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয়দের পরিবারগুলির। কাবুলে আটকে রয়েছেন নদিয়ার তাহেরপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস ও অশোক ঘোষ।
প্রায় বছর পাঁচেক ধরে আফগানিস্তানে থাকা আমেরিকান দূতাবাসে রান্নার কাজ করছেন তাহেরপুর পৌরসভার জে ব্লকের বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস। মাস ছ’য়েক আগে একবার ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। তারপর আবার ফিরে যান কর্মস্থল কাবুলে। দু’জনেই মার্কিন দূতাবাসে রান্নার কাজ করতেন। বর্তমানে তাঁরা সেখানেই আটকে রয়েছেন।
আফগান তালিবানদের দখলে যেতেই, দেশে ফেরার জন্য যাবতীয় চেষ্টা শুরু করেছেন কৃষ্ণ। কিন্তু দু'দুবার ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বর্তমানে ওই দেশে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করছেন স্ত্রী মৌমিতা দাস। কীভাবে স্বামী বাড়ি ফিরবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। ছেলের ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে রয়েছেন মা অপর্ণা দেবীও।
কৃষ্ণ দাসের স্ত্রী মৌমিতা দাস বললেন, যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, সব সময় হয়ে উঠছে না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। অন্যদিকে, অশোক ঘোষের স্ত্রী সুমিত্রা বললেন, আমরা চাই খুব তাড়িতাড়ি ফিরিয়ে আনা হোক।
সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরেছেন নদিয়ার রানাঘাটের বেগোপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রিয় মিত্র ও শানু গঞ্জালভেস। দুজনেই কাবুল এয়ারপোর্টে অস্থায়ী মার্কিন দূতাবাসে রাঁধুনির কাজ করতেন।
২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে সুপ্রিয় ওই দেশে। আর শানু গিয়েছিলেন ২০২০-তে। শান্ত কাবুলকে চোখের সামনে ধীরে ধীরে অশান্ত হতে দেখেছেন তাঁরা।
দেশে ফিরে সুপ্রিয় বলেছেন, শেষ দু’মাস কাবুল এয়ারপোর্টে কাজ করেছি। চোখের ওপর পরিবেশ বদলাতে দেখেছি। নিজে চোখে দেখেছি গ্রেনেড, বোমা পড়তে। যত দেখছি, তত ভয় লাগছে।
গত এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন ২জনে। ২৮ জুলাই ফিরেছেন সুপ্রিয় ও ৪ অগাস্ট এসেছেন শানু। মনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি। উদ্বেগ কেটেছে পরিবারেরও।
প্রাণ বাঁচিয়ে নিজেরা দেশে ফিরেছেন। তাঁদের এখন একটাই প্রার্থনা, নিরাপদে দেশে ফিরুক অন্যান্য ভারতীয়রা। শানু বললেন, সমবয়সী অনেকেই রান্নার কাজে গেছি। অনেকে ফিরতে পারেনি অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বিস্ফোরণ হতে দেখেছি। চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।