কলকাতা: জেতার পর থেকে টোপ দিয়েছিল তৃণমূল। ভয়ও দেখিয়েছিল, তাও দমানো যায়নি তাঁকে, দাবি ভাঙড়ের বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকির। কী কী টোপ দিয়েছিল তৃণমূল? এবিপি আনন্দে এক্সক্লুসিভ নৌশাদ।


সাগরদিঘি মডেলে যাঁর জয়, সেই বাম সমর্থিত কংগ্রেস বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস কয়েকদিন আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূলের যোগ দিয়েছেন। তারপরেই কথা উঠেছে নৌশাদ সিদ্দিকিকে নিয়েও। কারণ অবিজেপি, অতৃণমূল বিধায়ক বায়রন দল বদলানোর পরেই নৌশাদ কী করবেন সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই আবহেই মুখ খুললেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি।


তাঁর মতে,'দলবদলের ২টো প্রধান কারণ থাকতে পারে, একটা হল লোভ, অন্যটা ভয়ভীতি। বায়রনদাকে কীভাবে নিয়েছে সেটা তো বলতে পারছি না। উনি অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল। ওঁকে হয়তো টাকার জন্য দলবদল করানো হয়নি। হয়তো ভয়ভীতি ছিল কিছু।' তিনি আরও বলেন, 'কথা আর কাজ, এটাই বায়রনের সঙ্গে তফাৎ। উনি বলেছেন, উন্নয়নের জন্য কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন। এই যুক্তি অযৌক্তিক। এটা ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা।' তাহলে উনি কী করবেন? নৌশাদ সিদ্দিকির সাফ দাবি, 'তৃণমূলের কাছে কোনও শর্তেই আত্মসমর্পণ নয়।' তিনি জেতার পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে তাঁকে তৃণমূল টোপ দিয়ে এসেছে বলে দাবি আইএসএফ বিধায়কের। তিনি বলেন, 'ভাঙড়ের বিধায়ক হওয়ার পরেই লাগাতার চাপ দিয়ে এসেছে তৃণমূল। টাকার টোপ থেকে ভয় দেখানো, করে করে হাঁফিয়ে গেছে তৃণমূল।' ঠিক কত টাকার টোপ দেওয়া হয়েছে তা অবশ্য খোলসা করেননি বিধায়ক। তবে তাঁর দাবি, ১-২ কোটি নয়, অনেক টাকার টোপ এসেছিল তৃণমূলের কাছ থেকে। পাশাপাশি কখনও ভাল কোনও পদ বা মন্ত্রিত্বের টোপও দেওয়া হয়েছিল।


একাধিক মামলায় দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দি ছিলেন নৌশাদ। তারপরে জামিন পান। সেই ঘটনায় বারবার উত্তাল হয়েছিল রাজপথ। আইএসএফ বিধায়কের হুঙ্কার,  'জেল খাটিয়েও আমাকে দমাতে পারেনি তৃণমূল, নৌশাদ দলবদল করবে না, এটাই আমার কমিটমেন্ট।'


বিধানসভায় তো অতৃণমূল, অবিজেপি আর কেউ নেই? লড়াই চালাতে পারবেন? নৌশাদ সিদ্দিকির জবাব, '২ বছর বিধানসভায় একাই ছিলাম, বাকি ৩ বছর চালিয়ে নেব। দেয়ার ইজ নো অপশন, লক কিয়া যায়।' কোনও শর্তে দলবদল করবেন না সাফ জানালেন ভাঙড়ের বিধায়ক।


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, 'ওঁকে টাকার টোপ কে দিয়েছিলেন। ওটা বলতে পেছিয়ে যাচ্ছেন কেন? কে ভয় দেখাচ্ছে সেটা তো বলা দরকার। দায়িত্বশীল বলছেন নিজেকে, সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন, তাহলে এটা বলছেন না কেন? উনি বললেন তৃণমূলে আসবেন না। তাহলে কি বিজেপিতে যাবেন? উনি উহ্য রাখছেন বিজেপির কথা, উহ্য রাখছেন সিপিএমের কথা। রাজনীতিতে শেষ কথা নেই সেটাও বলছেন।'


সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলেন, 'ওঁর এই সাহসী লড়াই আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি। পশ্চিমবাংলার মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছে। এই কারণেই আইনগত সহযোগিতা করেছেন অনেকেই। তৃণমূল এরকম বিধায়ক কেনাবেচার অপরাধ করেছে। বিজেপিও এই কাজ করে। এই দুই গণতন্ত্র বিরোধী স্বৈরাচারী শক্তি হঠানোর জন্য সব তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী শক্তিতে একসঙ্গে লড়াইয়ের আবেদন করেছি। সেই কাজই চলছে।'


বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'কে আত্মসমর্পণ করবেন, কে করবেন না সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। নৌশাদ সিদ্দিকি বলেছেন আত্মসমর্পণ করেননি তার জন্য তাঁকে অভিনন্দন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যাঁরা কংগ্রেসের হয়ে জেতেন তাঁরাই তৃণমূলে যান। আমাদের দলেও কেউ কেউ ঘুরতে এসেছিলেন। ভোটের পরে চলে গিয়েছেন।'


আরও পড়ুন: Appetite: খাবার দেখলেই অনীহা? একেবারেই নেই খিদে? প্রতিদিন সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে সমাধান হবে সমস্যার