কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য় সরকারি চাকরি, এই ধারণার বদল আনতে হবে বলে মন্তব্য করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Abhijit Vinayak Banerjee)। তাঁর মতে, যতদূর পড়াশোনা, তত লাভ।
যতদূর পড়াশোনা, তত লাভ, মনে করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্য়ায়
এ রাজ্য়ে পড়ুয়াদের টিউশন পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দেশের মধ্য়ে এ রাজ্য়ই সবচেয়ে বেশি হারে পড়ুয়া সরকারি স্কুলে পড়ে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, স্কুলে নাম নথিভুক্ত করা পড়ুয়ার সংখ্যাও চমকপ্রদ। কিন্তু, পড়াশোনা কতটা হচ্ছে?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের উপস্থিতিতে, বুধবার প্রকাশিত ২০২২-এর ASER (আসের) বা Annual Status of Education Report -এর রিপোর্ট, সেই প্রশ্নই তুলে দিল।
বুধবার আসের-এর রিপোর্ট প্রকাশের সময় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা ভাবি স্কুল যাওয়ার উদ্দেশ্য সরকারি চাকরি, আর কিছু নয়। এই ধারণায় বদল আনতে হবে। যতদূর পড়বে, ততদূর লাভ।"
ASER-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্য়ের গ্রামীণ এলাকায় তৃতীয় শ্রেণির শিশুদের মধ্য়ে ৮ শতাংশ বর্ণ পড়তে অক্ষম। ১৮.১ শতাংশ অক্ষর পড়তে পারে, কিন্তু, শব্দ বা তার বেশি নয়। ২২ শতাংশ শব্দ পড়তে পারে, কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া প্রথম শ্রেণিস্তরের পাঠ্যক্রম পড়তেই অক্ষম। ৩৩ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণিস্তরের পাঠ্যক্রম পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত স্কুল পরিদর্শকরাও! বাবার স্কুলে ছেলের চাকরির ঘটনায় বিস্ফোরক বিচারপতি
অঙ্কের ক্ষেত্রেও তৃতীয় শ্রেণির শিশুদের মধ্য়ে ৫ শতাংশের বেশি শিশু ১ থেকে ৯ সংখ্য়া পর্যন্ত চিনতে পারে না। ৩৪.৫ শতাংশ শিশু ৯৯ পর্যন্ত সংখ্য়া চিনতে পারে। কিন্তু বিয়োগ করতে পারে না। ১৮.৮ শতাংশ শিশু বিয়োগ করতে পারে, কিন্তু ভাগ করতে পারে না।
অবশ্য এই সমস্য়া শুধুই বাংলার নয়, সার্বিক। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্কুলে শিশুর সংখ্যা বাড়লেও, তাদের পঠন পাঠনের উন্নতি তেমন আশাপ্রদ নয়।
এ বিষয়ে, সরকারের ভূমিকাই যে গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও উঠে আসে বুধবারের আলোচনায়।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ সুকান্ত চৌধুরীও। তিনি বলেন, "ভর্তি বেড়েছে, আশা বাড়েনি। অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সে কী শিখছে, বোঝা যাচ্ছে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তত খারাপ নয় স্কুলে যে শিক্ষক নেই, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে তোলপাড় হচ্ছে, সেই বিষয়টাও প্রাসঙ্গিক।"
রাজ্য ও দেশের স্কুল শিক্ষার হতাশা এবং স্বস্তির একাধিক তথ্য উঠে এল রিপোর্টে
প্রথম এডুকেশন ফাউন্ডেশন এবং লিভার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সমীক্ষা প্রকাশ অনুষ্ঠানে উঠে এল রাজ্য ও দেশের স্কুল শিক্ষার হতাশা এবং স্বস্তির একাধিক তথ্য। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যখন তোলপাড় রাজ্য়। স্কুল সিস্টেমের মধ্য়ে থেকে চিহ্নিত হচ্ছেন অযোগ্য শিক্ষক। তখন এই রিপোর্ট এবং নোবেলজয়ীর বার্তা বাংলার শিক্ষায় এখন কতটা সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারে, সেটাই দেখার।