সমীরণ পাল, বনগাঁ: বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন প্রবীণ নাগরিকরা। কখনও ডেবিট কার্ড সক্রিয় করতে গিয়ে তো কখনও প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে। এবার বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খোওয়া গেল এক বৃদ্ধের। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় (North 24 Pargana)।
জানা যাচ্ছে, কিছুদিন আগেই নিজের বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর (Bongaon) পুরনো চাকদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা শ্যামসুন্দর কুন্ডু। অগস্ট মাসের শেষ দিকে দুই ব্যক্তি তাঁর বাড়ি কেনার জন্য দেখতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে বাড়ি কেনাবেচার পাকা কথাও হয় তাঁর। শ্যামসুন্দর বাবুর বাড়িটি কেনার আগ্রহ দেখিয়ে তাঁরা তাঁকে তিন লক্ষ টাকার একটি চেকও দিয়েছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি বাকি টাকা অনলাইন পেমেন্ট করার জন্য ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে ক্যানসেল চেকও নিয়েছিলেন তাঁরা। তবে, ব্ল্যাঙ্ক চেকে তাঁরা নিজেদের পেন দিয়ে ক্যানসেন কথাটি লিখে নিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন তিনি। এরপরই ঘটে বিপত্তি। ওই দুই ব্যক্তিকে ক্যানসেল চেক দেওয়ার পরই ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা তোলার মেসেজ আসে শ্যামসুন্দর কুন্ডুর মোবাইলে। টাকা তোলার মেসেজ পাওয়ার পরই তিনি যোগাযোগ করেন ব্যাঙ্কের সঙ্গে। কিন্তু তিনি অভিযোগ জানাচ্ছেন যে, এই বিষয়ে ব্যাঙ্ক তাঁর সঙ্গে কোনও সহযোগিতাই করেনি বলে।
আরও পড়ুন - North 24 Parganas: ফের মনুয়াকাণ্ডের ছায়া, প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের অভিযোগ
শ্যামসুন্দর বাবু অভিযোগ জানাচ্ছেন যে, এই ঘটনায় ব্যাঙ্কেরও গাফিলতি রয়েছে। তিনি যে সাক্ষর করার সময়ে নামের আগে 'শ্রী' ব্যবহার করেন, তা ওই দুই ব্যক্তির জানার কথা নয়। তাহলে তাঁরা জানলেন কীকরে? তাছাড়া, এতগুলো টাকার চেক ক্যাশ করার আগে ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তাঁকে একবারও জানানো হয়নি। প্রতারণার ঘটনা ঘটার পর ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন শ্যামসুন্দর কুন্ডুর পরিবারও। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ব ওই ব্যাঙ্ককে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তাঁর আইনজীবী দীপাঞ্জয় দত্ত। তিনি চাইছেন এর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক এবং যাতে তিনি সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পান, তার ব্যবস্থা করুক।
ব্যাঙ্কের গাফিলতি প্রসঙ্গে বনগাঁ আদালতের আইনজীবী দীপাঞ্জয় দত্ত বলেছেন, 'রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম রয়েছে যে, বড় অঙ্কের টাকার চেক ক্যাশ হওয়ার আগে গ্রাহককে অবশ্যই জানানোর। এবং গ্রাহক অনুমতি দিলে তবেই চেক ক্যাশ করা। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টে গ্রাহকের সঙ্গে অসহযোগিতা করা হয়েছে। আগামি সাত দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ককে এই ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। তেমনই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সময়ের মধ্যে উত্তর না পেলে পরবর্তীতে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' যদিও এই বিষয়ে বনগাঁর ওই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।