সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নামে কুৎসা করলে, জিভ টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হবে', হুমকি যুব তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সম্রাট তপাদারের (Samrat Tapadar)। গতকাল ব্যারাকপুরে শহিদ মিনার সমাবেশের প্রস্তুতি সভায় বিরোধীদের, এই ভাষাতেই হুমকি দেন তিনি। ভিডিও ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সম্রাট তপাদার হলেন মূলত ব্যারাকপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। গতকাল ব্যারাকপুরে শহিদ মিনার সমাবেশের প্রস্তুতি সভায় বিরোধীদের সম্রাট তপাদার হুমকিতে বলেছেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করলে, জিভ টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হবে। আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করলে আমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে লড়াই করব।' প্রসঙ্গত,এর আগে বঙ্গ রাজনীতিতে শাসক বিরোধী দুই তরফেই একাধিকবার হুমকি ইস্যু প্রকাশ্যে এসেছে। বিরোধীদের নিশানা করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ।
গতবছর অগাস্টের মাঝামাঝি,কামারহাটিতে সৌগত রায় হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। তৃণমূলের সব চোর বলে মিছিল করলে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে।' মূলত রাজ্যে মুখ খোলা এবং মুখ খুলে বিস্ফোরক মন্তব্যের উদাহরণ ভুরিভুরি। পাশাপাশি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'বদলার বদলে বদলা চাই।' পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) গ্রেফতারির পর এমনটাই হুঙ্কার দিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
চুঁচুড়ার জনসভায় তিনি বলেছিলেন, 'মমতাদি বলেছিলেন বদলা নয়, বদল চাই। আমি বলছি বদল নয়, বদলা চাই।'তিনি বলেন, 'আমাকে ক্ষমা করবেন মমতাদি, বলে ফেললাম। কিন্তু আপনি যে মানসিকতা নিয়ে বলেছিলেন, সেই মানসিকতার লোক বিরোধী শিবিরে নেই। আপনার অনেক বড় মানসিকতা। কিন্তু আজ বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম যে ভাবে নোংরামি করছে আমাদের সে দিনই বলা উচিত ছিল বদলার বদলে বদলা চাই।'
'কেউ চোর বললে পাল্টা হবে', সংযোজন চুঁচুড়ার জোড়াফুল বিধায়ক (TMC MLA) অসিত মজুমদারের। একই মঞ্চ থেকে চুঁচুড়ার জোড়াফুল বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, 'কোথাও যদি কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসম্মান করেন পাল্টা জবাব দাও।' আর সেই বিতর্কের আগুনই উসকে দিয়ে সৌগত রায় হুমকি দিয়ে বলেছিলেন ‘তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। তৃণমূলের সব চোর বলে মিছিল করলে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে।'
তবে এবার যার নামে কুৎসা করলে হুমকি দেওয়া হল তৃণমূল নেতার তরফে, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভা ঘিরেও এবার জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি ইস্যু। আগামী ২৯ মার্চ শহিদ মিনারে হতে চলেছে অভিষেকের সভা। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে সভাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করে পুলিশ। শহিদ মিনারের পাশেই যেহেতু রয়েছে ডিএ আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ তাই প্রাথমিকভাবে সভাস্থল নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পুলিশের তরফে একদিন আন্দোলনকারীদের অবস্থান স্থগিত রাখার জন্য বললে রাজি হননি আন্দোলনকারীরা। আদালতের অনুমতি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাই পুলিশের শর্ত মানতে রাজি হননি আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন, আজ রাজ্য সফরে রাষ্ট্রপতি, কলকাতার কোন কোন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ ?
আগামী বুধবার,২৯ মার্চ, ফের কর্মবিরতির পরিকল্পনা করছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সেদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে রেড রোডে অম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই শহিদ মিনারে হবে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের সমাবেশ। প্রধান বক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার প্রস্তুতি নিয়ে স্পোর্টিং ইউনিয়ন টেন্টে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করল পুলিশ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্পোর্টিং ইউনিয়ন টেন্টের সামনে মঞ্চ তৈরি করা হবে। মঞ্চের মুখ থাকবে শহিদ মিনারের দিকে।