সমীরণ পাল,উত্তর ২৪ পরগনা: সাইবার-জালিয়াতির (cyber fraud) অভিযোগ প্রমাণে এবার অস্ত্র অঙ্ক (mathematics)। আজ্ঞে হ্য়াঁ, ঠিকই দেখেছেন। গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সাইবার ও ব্য়াঙ্ক প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করতে মরিয়া সরকারি কৌঁসুলি (public prosecutor)। নির্দিষ্ট করে বললে ‘ন্যাট’ও ‘লুন অ্যালগরিদম’-র সূত্র কাজে লাগিয়েই মামলার মোড় ঘোরালেন তিনি। কিন্তু কী ভাবে? একটু খোলসা করে বলা যাক।


কোথায় ও কী ভাবে জালিয়াতি?
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২০ সালের জুলাইয়ে অর্থাৎ অতিমারির মধ্যে বাগুইআটির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানিয়েছিল তাদের এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় দু’‌কোটি টাকা উদ্ধার হলেও বাকি এক কোটি টাকার হদিস মেলেনি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে  ওই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট চেন্নাইয়ে। কিন্তু টাকা সরানো হয়েছে বাগুইআটির শাখা থেকে। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের এক অফিসার-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। পরে ওই অফিসার এবং তাঁর এক সঙ্গীর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করা হয়। জানা যায়,ওই অফিসার মোবাইলের সিম জালিয়াতি করে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর এবং ই-মেল বদলে দেন। গ্রাহকের নামে একটি ডেবিট কার্ড বার করে তা নিজের কাছে রাখেন। পরে সেগুলির সাহায্যেই টাকা সরিয়ে ফেলেন তিনটি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে। ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি তৈরি করে দিয়েছিলেন ওই ব্যাঙ্ক অফিসারের এক সঙ্গী। তিনি অবশ্য কোনও ব্যাঙ্কের সঙ্গেই যুক্ত নন। অভিযুক্ত দুজনেই প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে জামিনের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু জামিন মেলেনি। যদিও গত ১৩ মে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, দু'মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতের বিচার শেষ করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ীই বারাসত আদালতে বিচারক ভবানীশঙ্কর শর্মার এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। সরকার পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস। সরকার পক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, দ্রুত বিচার শেষের নির্দেশ থাকলেও এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি যে-আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছিলেন, তা চিহ্নিত করাটাই ছিল বড় সমস্যা। কারণ তদন্তে দেখা যায়, ওই একই আইপি অ্যাড্রেস একই সময় অন্তত দশ জন ব্যবহার করেছেন। এবার উপায়?


যে ভাবে কাজে লাগল গণিত...
সমস্যার সমাধানে ‘ন্যাট’নামে একটি গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায়। সোজা করে বললে, ওই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি আইপি একাধিক লোক ব্যবহার করলেও তাঁদের মধ্য থেকে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা সম্ভব। তা ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি যে-মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিলেন, তার আইইএমআইনম্বর চিহ্নিত করতে ‘লুন অ্যালগরিদম’ব্যবহার করেছেন বিভাসবাবু। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক চেন্নাইয়ের বাসিন্দা হওয়ায় সেখানের থানাতেও অভিযোগ করা হয়েছিল এবং তামিল ভাষায় লেখা নথি ব্যবহার করা হয়েছে ওই মামলায়। সেগুলির অনুবাদ করা হয় গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে। সব মিলিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণ, ধারণা সরকার পক্ষের। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেবিচারের কাজ দ্রুত হচ্ছে। তবে মামলার এই পর্যায়ে এসে সরকার পক্ষের আশা, তাদেরই জয় হবে।
এবং সেক্ষেত্রে মুশকিল-আসানের ভূমিকা থাকবে গণিতেরই, মানছেন তাঁরা।


আরও পড়ুন:'ব্যাঙ্ক অব মমতা, এখানে চোরাই মাল রাখা হয়' পার্থ ইস্যুতে বিস্ফোরক অধীর