বসিরহাট(উত্তর ২৪ পরগনা), সমীরণ পাল : ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্তে কর্মহীন হতে বসেছে লক্ষাধিক শ্রমিক। কয়লা, বালি, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইট তৈরির খরচ বেড়েছে। এদিকে করোনা আবহে ইটের চাহিদা কমায় বাজারদর নিম্নমুখী। এই পরিস্থিতিতে মালিকদের সিদ্ধান্ত, এবছর ইটভাটা বন্ধ রাখা হবে। সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে শ্রমিক ও মালিক সংগঠন।


উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় ৫৬৩টি ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। কারণ, কয়লার দ্বিগুণ মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোপণ্য ও লাল বালির দামও সমানে টেক্কা দিচ্ছে। এদিকে করোনা আবহে আবাসন শিল্পে মন্দার কারণে ইটের চাহিদা নেই। ৮ হাজার টাকার ইট এখন ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  


ইটভাটা বন্ধের কারণে মহকুমার লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হতে বসেছে। ইতিমধ্যে CITU ও INTTUC- দুটি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল করে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে ইটভাটা চালু না করলে মহকুমার লক্ষাধিক শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা এই ভাটা শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা না খেতে পেয়ে মরবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি খুব শীঘ্রই উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবেন। 


মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বসিরহাটের ১০টি ব্লক এবং ৩টি পুরসভা এলাকায় ৫৬৩ টি ইটভাটা আছে। প্রতি ভাটায় কমপক্ষে ২০০-২৫০ মানুষ কাজ করেন। এক একটি ভাটা থেকে প্রতি বছর কম করে ২৫-৩০ লাখ ইট তৈরি হয়। এ বছর ইট বিক্রি এতটাই কমে গেছে যে অধিকাংশ ভাটায় উৎপাদনের ৭০ শতাংশের মত ইট জমে গেছে। এই অবস্থায় শীতের শুরুতে ফের ইট তৈরির ঝুঁকি নিতে রাজি হচ্ছেন না অধিকাংশ মালিক। তাঁদের বক্তব্য, গত বছর যেখানে প্রতি টন কয়লার মূল্য ছিল ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, সেখানে এবারে তা বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।


উল্লেখ্য, লাল বালির দাম দ্বিগুণ, ডিজেলের দিন দিন মূল্যবৃদ্ধি- এ সবের পাশাপাশি আন্ডার লোডিংয়ের কারণে ইট বিক্রি নেই। ইটভাটার মালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক বারিক বিশ্বাস জানান, এই অবস্থায় ইট তৈরি করলে প্রতি ইটে ২ থেকে ৩ টাকা ক্ষতি হবে। ক্ষতির কথা ভেবেই কেউ ভাটা চালাতে রাজি হচ্ছে না। এখনও লক্ষ লক্ষ ইট ভাটায় পড়ে আছে। ইট তৈরি করে রাখার জায়গা নেই।



এদিকে ইটভাটা চালু না করলে আগামী দিন বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন CITU-র জেলার সম্পাদক গার্গী চট্টোপাধ্যায়। সমস্যার সমাধান চেয়ে মহকুমাশাসক থেকে নবান্ন পর্যন্ত চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান INTTUC-র বসিরহাটের সভাপতি।