সমীরণ পাল, অশোকনগর (উত্তর ২৪ পরগনা) : অশান্ত সুদান (Sudan) থেকে অশোকনগরের (Ashokenagar) বাড়িতে ফিরলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (Software Engineer) সুরজিৎ দে। বাড়ি ফিরে সেখানকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তিনি। এদিকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ছেলে ফিরতে পারায় খুশি সুরজিতের পরিবারের লোকজন।


সুরজিৎ দে অশোকনগর কল্যাণগড়ের বাসিন্দা। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ১ মার্চ তিনি সুদানের রাজধানী খার্তুমে যান। একটি টেলিকম সংস্থার সফটওয়্যার-এর কাজ করতে। কিন্তু ১৫ তারিখ থেকেই সেখানে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় গুলিবর্ষণ। তাঁরা যে হোটেলে ছিলেন সেখানে লোডশেডিং হয়। সারা দেশেই বিদ্যুৎ পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় ১২ দিন হোটেলের জেনারেটর এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা করে চালানো হতো। পরে ডিজেলও শেষ হয়ে যায়। তাতে মোবাইল চার্জ দেওয়ারও সমস্যা হচ্ছিল। বাড়ির সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলেন না সুরজিৎ-রা। হোটেলে খাবার শেষ হয়ে যায় এবং জলের অভাব দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য সিজ ফায়ার ঘোষণা হলেও, তাও মানা হচ্ছিল  না। সিজ ফায়ারের মধ্যেও অবিরাম গুলিবর্ষণ হতে থাকে। আমেরিকা-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাসও বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেই আতঙ্কিত ও মরিয়া হয়ে ওঠেন সুরজিৎ এবং তাঁর সঙ্গীরা। পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। ভারতীয় দূতাবাসের কাছে তাঁরা নিরাপদে দেশে পৌঁছানোর আবেদন জানান। 


কোন পথে রক্ষে ?


তাদের দেখানো পথেই ৪৯ জন মিলে ভারতীয় মুদ্রায় দশ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে বাস ভাড়া করেন। একেক জনকে ৩০ হাজার টাকা করে বাস ভাড়া দিতে হয়। ৪৯ জন মিলে সেই বাসে জীবন বাজি রেখে ২৪ এপ্রিল রওনা হন পোর্ট সুদানের উদ্দেশে। ১২ ঘণ্টার ভয়াবহ জার্নি শেষে তাঁরা পোর্ট সুদানে পৌঁছন। মাঝেমধ্যেই বাস থামিয়ে তাঁদের চেক করছিল আরএসএফের সশস্ত্র জওয়ানরা। ছিল ভাষাগত সমস্যাও। তারা আরবি ছাড়া কিছুই বোঝে না। যে কোনও মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে বচস বাঁধলেই নিশ্চিত বুলেট চলতে পারতো। হতে পারতো প্রাণহানির ঘটনা। 


যদিও তাঁরা নিরাপদে পোর্ট সুদানে পৌঁছন। সেখান থেকে তাঁদের ভারতীয় দূতাবাস ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তুলে নেওয়া হয়। সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁদের। এরপরে সেখান থেকে বিমানে ২৬ তারিখ দিল্লি এসে পৌঁছান তাঁরা। বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছান সুরজিৎ এবং তাঁর কয়েকজন সঙ্গী। কিন্তু যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি অশোকনগরের বাড়িতে ফিরেছেন, তাতে তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছেলেকে আর বিদেশে পাঠাবে না। 


আরও পড়ুন ; গুণের 'খনি', কিন্তু কখন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কমলা লেবু ?


মাত্র কয়েক মাস আগেই সুরোজিতের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের এক মাসের মধ্যেই কর্মসূত্রে যেতে হয়েছিল সুদানে। কিন্তু, সেখানে যে অভিজ্ঞতা এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের হল তাতে তিনি হতভম্ব। কোনওমতে প্রাণ হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। একমাত্র ছেলেকে যে আবার সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে ফিরে পাবেন সেটাই ভাবতে পারছিলেন না মা রীতা দে। ছেলের চিন্তায় এই কয়েকটা দিন ঘুমাতে, খেতে পারেননি বাবা স্বপন দে-ও।


তবে ভারতীয় দূতাবাসের তৎপরতায় অভিভূত সুরজিৎ এবং তাঁর পরিবার। সুরজিৎ জানান, এখনও প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয় অশান্ত সুদানে আটকে আছেন। তাঁদেরও দ্রুত উদ্ধারের আবেদন জানিয়েছেন সুরজিৎ।


আরও পড়ুন ; অশান্ত সুদান থেকে ১৭০০-রও বেশি ভারতীয়কে সরানো গিয়েছে, ঘোষণা বিদেশসচিবের