সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: বিপাকে তৃণমূল (TMC) পরিচালিত ভাটপাড়া পুরসভা (Bhatpara Municipality)। সোমবারের মধ্যে ওই পুরসভার পেনশনভোগীদের বকেয়া গ্র্য়াচুইটি ও পেনশন মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court)। কর্মীদের বেতন ছাড়া অন্য় কোনও খাতে টাকা খরচ করা যাবে না। কড়া নির্দেশ আদালতের। এই আবহে সাম্মানিক ভাতার টাকা পুরসভাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন এক তৃণমূল কাউন্সিলর। 


বকেয়া পেনশন, বন্ধ সাম্মানিক


আর্থিক জাঁতাকলে পড়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল পরিচালিত ভাটপাড়া পুরসভা। একদিকে আদালতের কড়া নির্দেশ, অন্য়দিকে, পুরসভার চেয়ারম্য়ান, কাউন্সিলরদের সাম্মানিক ভাতা প্রদানের বাধ্য-বাধকতা।


ভাটপাড়া পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটি থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় ২০২১ সালের ৫ অগাস্ট, ৮ সপ্তাহের মধ্যে গ্র্যাচুইটি মেটানোর নির্দেশ দেয় আদালত। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ভাটপাড়া পুরসভার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, কর্মীদের বেতন দেওয়া ছাড়া আর কোনও খাতে টাকা খরচ করতে পারবে না ভাটপাড়া পুরসভা। সেই সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ আগামী সোমবারের মধ্যে বকেয়া পেনশন ও গ্র্যাচুইটি মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ভাটপাড়া পুরসভাকে কড়া তিরস্কার করেছে আদালত। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, দায়বদ্ধতা থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছেন চেয়ারম্য়ান। পুর কর্তৃপক্ষকে প্রচুর সময় দেওয়া হলেও, তাঁদের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি।


আদালতের নির্দেশের পর, ভাটপাড়া পুরসভায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে চেয়ারপার্সন ও কাউন্সিলরদের সাম্মানিক। এই আবহে ভাটপাড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জ্যোতি পাণ্ডে তাঁর সাম্মানিক ভাতা বাবদ পাওয়া টাকা পুরসভাকেই ফেরত দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার প্রায় এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার একটি চেকও সঙ্গে নিয়ে পুরসভায় যান তিনি। যদিও পুর চেয়ারপার্সন সেই চেক জমা নেননি। 


ভাটপাড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জ্যোতি পাণ্ডে বলেন, 'আমি টাকা ফেরত দিতে চাই। তাতে পুরসভার ফান্ডে সুবিধা হবে। ভবিষ্যতেও আর সাম্মানিক নেব না।'

ভাটপাড়া পুরসভার তৃণমূলনেত্রী ও চেয়ারপার্সন রেবা রাহা বলেন, 'পরে বোর্ড মিটিংয়ে এই বিষয়ে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে। ২০১৪ থেকে যে জিনিস বাকি রয়েছে তা আমি যদি ভাতা নাও নিই, আরও ১০ জন এই টাকা ফেরত দিলেও হবে না। আমরা সরকারের কাছে অনুদান চেয়েছি।' তৃণমূল পরিচালিত ভাটপাড়া পুরসভার এই পরিস্থিতিতে দলেরই একাংশের সমালোচনা শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেতা ও ভাটপাড়ার প্রাক্তন পুরচেয়ারম্য়ান অর্জুন সিংহর মুখে।

ব্য়ারাকপুরের তৃণমূল নেতা ও সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, 'আমি যখন চেয়ারম্য়ান ছিলাম এলআইসির ফান্ড থেকে পেনশন দিতে কোনও অসুবিধা হত না। এখানে কিছু অযোগ্য ব্যক্তি পুরসভা চালাচ্ছে।' ঘটনা সামনে আসতেই কটাক্ষ ছুড়ে দিতে দেরি করেনি বিজেপি। ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, 'আমি এখানকার বাসিন্দা। আদালতের নির্দেশ দেখে লজ্জিত।'


আরও পড়ুন: Murshidabad: তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের ঔরঙ্গাবাদের বাড়ি ও কারখানায় আয়কর দফতরের অভিযান

ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষ বলেন, 'আমরা অনেকটাই ব্য়াকলগ কাটিয়ে উঠেছি। আগামী ১৬ তারিখ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে জানাব আমরা কতটা কী করতে পারছি। পুরসভার ফান্ড থেকে কোনও বাড়তি খরচ করি না।' এই জটিলতা কীভাবে কাটে সেটাই দেখার।