সমীরণ পাল, বনগাঁ: আফগানিস্তান থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাড়িতে ফিরলেন তিনজন বাঙালি। গতকাল গভীর রাতে তাঁরা গোপালনগরের বাড়িতে ফেরেন। বিদ্যুত্ বিশ্বাস, পলাশ সরকার ও প্রবীর সরকার, এই তিনজনই কাবুল বিমানবন্দরে মার্কিন সেনার কেটারিংয়ের কাজ করতেন।
গোপালনগরে পাল্লা পঞ্চায়েতের গ্রাম শংকরপুর গ্রামের বিদ্যুৎ বিশ্বাস ও পলাশ সরকার এবং রঘুনাথপুরের বাসিন্দা প্রবীর সরকার । গতকাল গভীর রাতে এই তিনজন বাড়িতে ফেরেন। আজ সকাল থেকেই তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয় মানুষ।
পাশাপাশি, আফগানিস্তান থেকে ৭৮ জন যাত্রী নিয়ে দিল্লিতে আসছে বিমান। বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দুশানবে হয়ে বিমানটি দিল্লিতে আসবে। বিমানের ৭৮ জন যাত্রীর মধ্যে ২৫ জন ভারতীয়। বায়ুসেনার বিমানে কাবুল বিমানবন্দর থেকে ওই ৭৮ জনকে আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে, দুই সন্তানকে নিয়ে আফগানিস্তানের শরানে আটকে রয়েছেন বেহালার মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা দফাদার। কাবুলিওয়ালাকে বিয়ে করে সুদুর আফগানিস্তানে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে চান সঙ্ঘমিত্রা।
সুদূর আফগানিস্তানে বাড়ি থেকে বের করে বঙ্গতনয়াকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে খুন করেছিল তালিবান। সেই সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী মূলক লেখা, ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’-এর সূত্র ধরে তালিবান অত্যাচারের কথা জানতে পেরেছিল গোটা দুনিয়া। ফের তালিবানের দখলে আফগানিস্তান। আর তালিবান শাসনে দুই সন্তানকে নিয়ে কাবুল থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের শরানে আটকে পড়েছেন আরও এক কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ। সঙ্ঘমিত্রা জানিয়েছেন, ‘কখন যে কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। খুব আতঙ্কে আছি।’ তাঁর কাতর আর্জি, ‘হাতজোড় করে বলছি, এখান থেকে নিয়ে যান। আমি আর পারছি না।’
বেহালার মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা প্রায় ১৬ বছর ধরে রয়েছেন আফগানিস্তানে। বছর চারেক আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে সেখানে একটি হাসপাতালে নার্সের কাজ করেন তিনি। বর্তমানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সেখানকার, তা উঠে এসেছে সঙ্ঘমিত্রার কথায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘মেয়েদের ধরে ধরে বিয়ে করছে। যে মহিলাদের সঙ্গে স্বামী থাকে না, তাঁদেরও নিয়ে যাচ্ছে। ছোট বাচ্চা মেয়েদেরও ছাড়ছে না। মোড়ে মোড়ে চেকিং করছে, বন্দুক-চাবুক দিয়ে মারছে। হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান। কারও বেতন দেওয়া হবে না। রোগীদের খাবার দেওয়া হবে না বলে দিয়েছে।’
ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কার্যত গৃহবন্দী অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সঙ্ঘমিত্রা। তিনি ভারতে ফিরতে চান।