অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: আলমবাজার মঠ (Alambazar Math)। ঐতিহ্যগতভাবেই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের (Ramkrishna Math And Mission) কাছে যার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য সেই আলমবাজার মঠের দায়িত্ব নিতে চলেছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ। আগামী শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। 


বিশেষ অনুষ্ঠান শনিবার...
আলমবাজার মঠ হস্তান্তর হয়েছে ইতিমধ্যেই। দায়িত্ব নিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ। তবে শনিবার বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। তার আগে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত এই মঠের আনাচ-কানাচ ঘুরে দেখল এবিপি আনন্দ। ভবনটির বহু অংশের জরাজীর্ণ দশা। কোথাও ফাটল ধরে গিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে। সূত্রের খবর, রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে সংস্কার করে। নতুন করে খুলবে। স্বামী প্রভানন্দের লেখা রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা বইটি থেকে জানা যায়, কাশীপুরের পরে বরানগর, সেখান থেকে তৃতীয় পর্যায়ে মঠের বিকাশ ঘটে আলমবাজারকে কেন্দ্র করে। চতুর্থ পর্যায়ে আসে বেলুড়। বেলুড়ের আগে রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম কার্যালয় ছিল আলমবাজার মঠ। রামকৃষ্ণ মিশনের কাজ কীভাবে, কোন দিশায় চলবে, এখানে বসেই নির্ণয় করেন স্বামী বিবেকানন্দ। আরও জানা যায়,  শিকাগো থেকে ফেরার পরে স্বামীজি এখানে এসে ছিলেন। সন্ন্যাসীদের দীক্ষা দিয়েছিলেন। এখানে স্বামীজির ঘরও ছিল। বস্তুত গোটা মঠ জুড়ে তাঁর স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। 


আর যা...
স্বামী প্রভানন্দের লেখায় আরও উল্লেখ রয়েছে, মঠবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, বরানগরে আগের বাড়ির জীর্ণ দশা-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। শুরু হয় নতুন ঠিকানার খোঁজ। মূল উদ্যোগে ছিলেন স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ। শেষপর্যন্ত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কাছে, আলমবাজারে মেলে এই বাড়ির সন্ধান। ১৮৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঠ স্থানান্তরিত হয় আলমবাজারে। স্বামী বিবেকানন্দ ছাড়াও, আলমবাজার মঠ সান্নিধ্য পেয়েছে স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী যোগানন্দ, স্বামী প্রেমানন্দের মতো ব্যক্তিত্বদের। আসতেন নাট্যকার গিরীশ ঘোষও। কত কাহিনির সাক্ষী এই মঠ। এখানেই এক মজার কাহিনি ঘটেছিল গিরীশ ঘোষের সঙ্গে। আলমবাজার মঠে এসে গিরীশ ঘোষ দেখেন, স্বামী অভেদানন্দ বারান্দায় ঘুমোচ্ছেন। তিনি তখন মজা করে একটু তুলো গুঁজে দেন অভেদানন্দর নাকে। কিন্তু নিঃশ্বাসের সঙ্গে তুলো আর নড়ছে না! গিরীশ ঘোষ ভাবলেন, তবে কি স্বামী অভেদানন্দ মারা গেছেন! তাই কি বাইরে বের করা রাখা! শুকনো মুখে নীচে নেমে শশী মহারাজকে গিরীশ ঘোষ প্রশ্ন করলেন, ওটা গেল কখন? উত্তর এল, আরে ও তো ওভাবেই ধ্যান করে! স্বামী অভেদানন্দ শবাসনে শব হয়ে গিয়েছেন। আলমবাজার মঠের প্রবেশপথেই নজরে পড়বে এই বোর্ড। যেখানে লেখা ভুতূড়ে বাড়ির উপাখ্যান। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ভাড়া নেওয়ার আগে এই বাড়িতে ২ জন আত্মঘাতী হন। আর সেই কারণে, মাত্র ১১টায় এই বাড়িটি ভাড়ায় পান মহারাজরা। মঠ উঠে আসার পরে মজার এক কাণ্ড ঘটেছিল সেখানে। তাঁরা খেয়াল করলেন, প্রতিদিন রাতে শুয়ে পড়ার পরে, ছাদে কেমন ঘড় ঘড় করে শব্দ হয়! ভূত নাকি? একদিন স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে, মহারাজরা বললেন, ও রামকৃষ্ণ দাদা, আমাদের কি ভূতের ভাটিখানায় নিয়ে এলে? স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ রেগে গিয়ে বললেন, তোর ভূতের বাবার শ্রাদ্ধ করছি! এই বলেই তিনি লাঠি নিয়ে সটান উঠে পড়লেন ছাদে! কিন্তু গিয়ে কী দেখলেন তিনি? দেখেন, ছাদে দুটো ডাম্বেল ও  আর লণ্ঠন প়ড়ে রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে এই আলমবাজার মঠ থেকেই বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায় কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়। ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত এখানেই ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। বহু স্মৃতি বিজড়িত এই মঠেরই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব তুলে নিতে চলেছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ। শনিবার সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্মরণানন্দ মহারাজ-সহ অন্যরা।


আরও পড়ুন:বাম আমলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ! পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা পোস্ট ঘিরে তোলপাড় সোশ্যাল