শিবাশিস মৌলিক, রাজীব চৌধুরী, বিটন চক্রবর্তী, সন্দেশখালি: কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এরাজ্যে এমন আক্রমণ এই প্রথম। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গিয়েছিল আগেই। এর আগে রাজ্যে একাধিকবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে উর্দিধারীদের। তার প্রেক্ষিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও তেমন নেই। দিনের পর দিন এই সাহসের ফলশ্রুতিই কি সন্দেশখালি? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।


প্রেক্ষাপট...
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে দিনভর তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হয়েছে। শাহজাহানের সব ফোন আপনি যদি সিজ করেন, তাহলে পেয়ে যাবেন। বসিরহাটের SP জোবি থমাস, তাঁর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, মারো....।'  তাঁর আরও দাবি, 'ED, IT, NIA, CBI-এর রেড-এর খবর কেউ পায় না। পুলিশ বলে দিয়েছে। যখন ওরা দেগঙ্গা বা শাসন ক্রস করছে, তখন পুলিশ বলে দিয়েছে... এর জন্য তো রাজ্য পুলিশ দায়ী।' সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর আবার বক্তব্য, 'ED-CBI-ইনকাম ট্য়াক্সের মধ্য়ে মুখ্য়মন্ত্রীর লোক আছে বলে মুখ্য়মন্ত্রী বলতেন, কারা তারা, কারা জানিয়ে দিয়েছে? নাকি এটা একটা এমন কোনও ব্য়বস্থা যেখানে, পরিকল্পিতভাবে রাজ্য়ের তৃণমূল এবং শাসক দল এমনভাবে চলতে চাইছে, যেখানে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়ে? দিদি-মোদি উভয়েরই লাভ হবে। রাজ্য়ও বেঁচে গেল, কেন্দ্রও বেঁচে গেল।' যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এর নেপথ্যে আরও বিষয় ভেবে দেখা দরকার।


খুঁটিনাটি...
রেশন কেলেঙ্কারির তদন্তে গিয়ে সন্দেশখালিতে ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর হামলার নেপথ্য়ে কী রহস্য় রয়েছে? তা নিয়ে নানা রাজনৈতিক তত্ত্ব উঠে আসছে। খোদ আগ্নেয়াস্ত্রধারী কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর এই হামলা দেখ অনেকেই থতমত! অনেকেই বলছেন, উর্দিধারীদের ওপর থেকে দুষ্কতীদের এই ভয় একদিনে উবে যায়নি! গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে সাব ইন্সপেক্টরকে গুলি করে মারা, বীরভূমে, সাব ইন্সপেক্টর অমিত চক্রবর্তীকে বোমা মেরে হত্য়া, দার্জিলিংয়ে সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিককে খুন, কিংবা কখনও ফাঁড়িতে আগুন ধরানো, কখনও থানায় হামলা করে পুলিশকে টেবিলের তলায় পাঠিয়ে দিয়ে....ধীরে ধীরে হাত পাকিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আর এবার এক্কেবারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর হামলা, সেই বেপরোয়া মনোভাবের চূড়ান্ত নিদর্শন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, 'বাংলার তৃণমূল সরকার এবং তৃণমূল পার্টির নখ, দাঁত ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে। আইনি মোকাবিলা করার ক্ষমতা যাদের থাকে না, যারা দুর্বল, যারা জানে যে তারা অপরাধী, তাই অপরাধকে ধামা চাপা দেয়ার জন্য তারা হিংসার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাই তারা হিংসার আশ্রয় নিয়েছে। ' 
পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, পুরোটাই বিজেপির চক্রান্ত। তাদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, 'সন্দেশখালির ঘটনা পুরোদস্তুর বিজেপির পরিকল্পনাপ্রসূত এবং বিজেপির চক্রান্ত। মুখ্য়মন্ত্রীদের-নেতাদের খারাপ ভাষায় আক্রমণ কর, মানুষকে গরম করে দাও, যাতে কোথাও একটা মানুষ রিঅ্য়াক্ট করে ফেলে, গন্ডগোল হয়, আর গন্ডগোল হলেই, তার ফায়দা লোটার রাজনীতি করবে বিজেপি।' সব দেখে অনেকেরই হয়তো  শঙ্খ ঘোষের সেই লাইনগুলি মনে পড়ে যাবে, যেখানে লেখা, 'দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল, অন্যে কবে না কথা, বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে, সেটাই স্বাভাবিকতা।' সেটাই কি কলকাতা থেকে দিল্লি...এখন সর্বত্র ঘোর বাস্তবতা?


 


আরও পড়ুন:শীতলকুচির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর পরিকল্পনা সন্দেশখালিতে? পরিকল্পিত ফাঁদ নাকি অন্য কারণ?