সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: তৃণমূল (TMC) পরিচালিত টাকি পুরসভায় (Taki Municipality) তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। দলেরই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন কাউন্সিলররা। সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন পুরপ্রধান, এমনটাই দাবি করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। যদিও দলেরই কাউন্সিলরদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে চেয়ারম্যানের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র (Conspiracy) হচ্ছে। আর এই সুযোগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে শাসকদলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। 


চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ


টাকি পুরসভা ১৩ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কাউন্সিলর রিজিয়া বেগম বলেছেন, চেয়ারম্যান দুর্নীতি করছে। এত পরিমাণে দুর্নীতি চলছে, সে দুর্নীতির সীমা নেই। টাকি পুরপ্রধান ও তৃণমূল নেতা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আমি দুর্নীতি করি কিনা, টাকির ভ্যানওয়ালা থেকে একজন শিক্ষক, প্রফেসর, যাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, সবাই বলবে। লোকসভা ভোটের আগে, উত্তর ২৪ পরগনার টাকি পুরসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে।তৃণমূল পরিচালিত টাকি পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন খোদ তৃণমূলেরই কাউন্সিলর।


পর্যটন শহরে রাজনৈতিক তরজার পারদ বেশ চড়া


অন্যদিকে, নিজেকে চক্রান্তের শিকার বলে পাল্টা দাবি করেছেন টাকির পুরপ্রধান ও তৃণমূল নেতা।ফলে জানুয়ারির হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতেও জেলার এই পর্যটন শহরে রাজনৈতিক তরজার পারদ বেশ চড়া।১৬ আসনের টাকি পুরসভায় ১৪টিই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। বাকি দুটি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে বিজেপি।বর্তমানে টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তৃণমূল নেতা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই স্বজনপোষণ, আর্থিক দুর্নীতির মতো একাধিক অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে তৃণমূলেরই ১২ জন কাউন্সিলর। এমনকি পুরসভার সম্পত্তি বেআইনিভাবে হস্তান্তরের অভিযোগও তোলা হয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। 


তৃণমূলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা তৃণমূলেরই কাউন্সিলরদের 


তৃণমূল কাউন্সিলর রিজিয়া বেগম আরও বলেন,পুরসভায় এত পরিমাণে দুর্নীতি চলছে যে, টিএমসির কাউন্সিলররা একেবারে হেনস্থা হয়ে গেছি যাতে কোনও আমরা কাজই করতে পারছে না। চেয়ারম্যান দুর্নীতি করছে। এত পরিমাণে দুর্নীতি চলছে সে দুর্নীতির সীমা নেই। আমরা মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়াব? দুর্নীতির থেকে রেহাই চাই। তৃণমূলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা তৃণমূলেরই কাউন্সিলরদের!আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত, বলছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান!


'এটা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত'


 সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আরও বলেন,আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা এসেছে। আমি দলকে আমার পদত্যাগপত্র আমি পাঠিয়েছিলাম। দলের প্রত্যেকটি নেতৃত্ব, আমার জেলা সভাপতি হাজি নুরুল ইসলাম, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত বসু, আমাদের রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামী-প্রত্যেকে আমার কাছে সেটা ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। কাউন্সিলররা যখন চাইছে না, তখন আমার থাকার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। এটা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং সারা টাকি হাসনাবাদের মানুষ এটাকে ভাল চোখে দেখছে না। 


আরও পড়ুন, 'হাসপাতালেই বন্ধ ঘরে মারধর..', কলকাতা মেডিক্য়ালে র‍্যাগিংকাণ্ডে জমা পড়ল রিপোর্ট


'উন্নয়ন তো কিছুই হয়নি'


 অপরদিকে, টাকি পুরসভা  ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিজেপি কাউন্সিলর  স্বপন ঋষি দাস বলেন, ২ বছরের মধ্যে উন্নয়ন তো কিছুই হয়নি। সমস্ত রাস্তাঘাট খারাপ আছে। পুরসভার চেয়ারম্যান সময় দিতে পারেন না। অনাস্থা আনার ফলে প্রায় এক মাস টোটালি কোনও কাজকর্মই হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যেই একটা গোষ্ঠীকোন্দল। তৃণমূলেরই কাউন্সিলরদের আনা এই অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সকলেই।