সমীরণ পাল, দেগঙ্গা: রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর  ভাণ্ডার প্রকল্পে বিপুল সাড়া মিলেছে। তার অনুকরণে এ বার বঞ্চনা, লাঞ্ছনার শিকার মায়েদের সম্মানপ্রদানে উদ্যোগী হলেন তৃণমূল নেতা। দেগঙ্গায় 'মা নম্বর ওয়ান' (Ma Number 1) প্রতিযোগিতার সূচনা করলেন তিনি। তাতে সাড়া পড়ে গিয়েছে এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অনুপ্রেরণাতেই এই প্রতিযোগিতা বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। 


উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas News) দেগঙ্গার (Deganga News) তৃণমূল (TMC) ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান। দৈনন্দিন জীবনে বঞ্চনা, লাঞ্ছনার শিকার মায়েদের সম্মানপ্রদানে 'মা নম্বর ওয়ান' প্রতিযোগিতার সূচনা করেন তিনি। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতাকে ঘিরেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। মায়েদের প্রতি দরদ দেখানোর নামে তৃণমূল নেতা রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। 


যদিও আনিসুরের দাবি,  মমতা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার মায়েদের সম্মান দিয়েছেন। পাশাপাশি মমতা নিজে যেমন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বিধায়কও, সাংসদও থেকেছেন। যিনি রাঁধেন, চুলও বাঁধেন, এই উপমা মমতার জন্য আদর্শ বলে মত আনিসুরের। সেই থেকেই এই প্রতিযোগিতার ভাবনা তাঁর মাথায় আসেন বলে জানিয়েছেন।


আনিসুর জানিয়েছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে  মায়েদেরকে সম্মানপ্রদানই লক্ষ্য তাঁর। তাই ওই প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও বিতরণ করা হয়। ছয়টি প্রতিযোগিতার মধ্যে যেমন ছিল 'হেঁশেলের হিরোইন' অর্থাৎ রান্নার প্রতিযোগিতা, তেমনই ছিল সেলাই, চুল বাঁধা, লুডো খেলা, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা-সহ একাধিক প্রতিযোগিতা।


আরও পড়ুন: Presidency University: প্রেসিডেন্সির হিন্দু হস্টেলের আবাসিকদের ওপর হামলার অভিযোগ TMCP-র বিরুদ্ধে


দেগঙ্গা ব্লক থেকে অজস্র মায়েরা অংশগ্রহণ করেন ওই প্রতিযোগিতায়। আবেগ আপ্লুত হয়ে ব্লক সভাপতিকে সাধুবাদ জানান তাঁরা। তবে এই নিয়ে দেগঙ্গায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বারাসাত সংগঠনিক জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদ তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, "মায়েদের সম্মান দিতে হলে আগে পুত্র, স্বামীহারা যে সমস্ত বৃদ্ধ মায়েরা বিডিও অফিসের সামনে দু'কেজি চালের আশায় বসে থাকেন, সেই মায়েদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে মা নাম্বার ওয়ান করে প্রচারের আলোয় আসতে চাইছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। আর যে সমস্ত মায়েদের সম্মান দেওয়া হয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের ঝান্ডাধারী তৃণমূল কর্মী। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এটি একটি তৃণমূলের ষড়যন্ত্র। মানুষ তা বুঝতে পেরেছেন।"


বিজেপি-র পাশাপাশি তৃণমূল নেতার সমালোচনা করেছে সিপিআইএম-ও। দেগঙ্গা ২ নম্বর এরিয়া কমিটির সিপিএম সদস্য নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, " লক্ষ্মীর ভাণ্ডাপ, মা এ সব তৃণমূলকে মানায় না। এটা রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলার মায়েদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হচ্ছে। মায়ের সম্মান পান না। তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে মায়েদের কপালের সিঁদুর মুছে যাচ্ছে। তাই এই মা অনুষ্ঠান রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।"


বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দেগঙ্গা ব্লক সভাপতি আনিসুর। তাঁর বক্তব্য, "বিজেপি-সিপিএম অর্থাৎ বিরোধীদের চোখে ছানি পড়েছে। আমরা বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করে দেব। বাঙালি জাতির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ, আর তৃণমূলের ১২ মাসে ২৪  পার্বণ। মানুষের জন্য থেকে সারা বছর সামাজিক কাজকর্ম করে থাকি। এগুলো বিরোধীরাও দেখতে পায়। তাই বিরোধীদের কটাক্ষে তৃণমূল গুরুত্ব দেয় না।"