সন্দীপ সরকার, মিরিক : শনিবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে বেড়েছে মিরিকের বালাসন নদীর জলস্তর। আর তার জেরেই এই নদীর উপরে থাকা দুধিয়া ব্রিজ ভেঙে গিয়েছে। তারপাশেই জলের তোড়ে ভেঙেছে একের পর এক বাড়ি, হোম-স্টে। উত্তরের প্রায় সমস্ত নদীই বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এখনও কতজন যে নিখোঁজ রয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েছেন তা নিশ্চিত নয়। মৃত্যুমিছিল কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানেন না। বালাসন নদীর উপর দুধিয়া ব্রিজ লোহা নির্মিত। কিন্তু জলের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে গিয়েছে ব্রিজের নীচে ঠ্যাকা একটি পিলার। নদীর পাড়ের অনেকটা অংশ ভেঙে গিয়েছে। জলের তোড়ে ভেঙেছে একের পর এক দোকান। শিলিগুড়ি এবং মিরিকের জনসংযোগের মূল স্তম্ভ ছিল এই দুধিয়া ব্রিজ। সেটাই ভেঙে যাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। এখনও ফুঁসছে বালাসন নদী। রাতে আবারও বৃষ্টি হলে, পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, সেই আশঙ্কাতেই কাঁটা হয়ে রয়েছেন স্থানীয়রা। আতঙ্কে ভুগছেন সকলে। 

Continues below advertisement

দুধিয়া ব্রিজ মিরিকের লাইফলাইন। মিরিক থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার অন্যতম অবলম্বন এই ব্রিজ। দার্জিংলিং হয়ে ঘুরপথে যাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু মিরিক থেকে শিলিগুড়ি যেতে গেলে বালাসন নদীর উপরের এই ব্রিজ দিয়েই যাতায়াত করেন সকলে। লোহার এই ব্রিজের নীচে থাকা তিনটি পিলারের একটিই বালাসন নদীর স্রোতে ভেঙে গিয়েছে। জলের তোড়ে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে আশপাশের দোকান, বাড়িঘর, হোম-স্টে। নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ অংশ তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভেই। বালাসন নদীর রুদ্ররূপ এখনও রয়েছে। এই নদীর উপরে থাকা ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক পাহাড়ি গ্রাম। মিরিক এবং শিলিগুড়িতে পরিষেবা পৌঁছে দিতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছে। বালাসন নদীর পাশের আপার দুধিয়া গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোটা গ্রাম জনশূন্য। তালা দেওয়া সব ঘরে। গ্রামে আনা হয়েছে লোহার জাল, যা দিয়ে বোল্ডার বেঁধে বাঁধ দেওয়া হবে নদীতে। তবে যেভাবে নদী ফুঁসছে তাতে এখনও বাঁধ দেওয়া যায়নি। 

শনিবার রাত ২টো- আড়াইটে নাগাদ ভেঙে গিয়েছে দুধিয়া ব্রিজ। এর জেরে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়েছে। এই দুই জায়গার সড়ক যোগাযোগ বিধ্বস্ত। দুর্যোগের জেরে দার্জিলিংয়ের সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন পরিষেবাও। দার্জিলিং থেকে মিরিক যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্রা পাঙ্খাবাড়ি হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে। ডুয়ার্সগামী একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং বহু ট্রেনের রুট বদল করা হয়েছে এই বিপর্যয়ের জেরে। বাতিল হয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার ট্যুরিস্ট স্পেশ্যাল ট্রেন। ঘুরপথে যাচ্ছে কাঞ্চনকন্যা এবং মহানন্দা এক্সপ্রেস। ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিনশো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। নিখোঁজ রয়েছেন প্রচুর মানুষ। 

Continues below advertisement