প্রকাশ সিন্হা, বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা: রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, শাসকদলের হর্তাকর্তা ছিলেন। সেখান থেকে এখন দিন কাটছে জেলে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চলছে টানাপোড়েন। সেই আবহেই জেলের দুরাবস্থা নিয়ে আদালতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন পার্থ চট্টপাধ্যায়। জেলে এসে পরিকাঠামো দেখে যেতে কাতর আর্জি জানালেন বিচারককে। 


মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমের শুনানিতে হাজির হন পার্থ। সেখানেই জেলের কুঠুরির দুরাবস্থার কথা তুলে ধরেন। মঙ্গলবার বিচারকের উদ্দেশে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকে বলতে শোনা গেল, "একবার এসে জেলের পরিকাঠামো দেখে যান। ২ হাজার বন্দির চিকিৎসার জন্য যা থাকা উচিত, এখানে কিছু নেই।"


বিগত ন'মাস ধরে জেলে রয়েছেন পার্থ। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজত শেষে মঙ্গলবার পার্থ, তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যকে ইডি-র বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়। এদের মধ্যে পার্থ-অর্পিতাকে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয়। সশরীরে আদালতে পেশ করা হয় মানিককে।


সেখানেই বিচারকের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পার্থ। জানান, তাঁর পা ফুলে গিয়েছে। খারাপ অবস্থা। তাতে বিচারক জানতে চান, ঠিক কোথায় যেতে চাইছেন তিনি, জেলে ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে কিনা। উত্তর দিতে গিয়ে, ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বিচারককে জেলে এসে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার আর্জি জানান পার্থ। জানান জেলে কিছু নেই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জেলের মধ্যে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত পার্থয়। তাতে জেল কর্তৃপক্ষের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ দিন বিচারকের কাছে পার্থ জানতে চান, আট মাস হয়ে গিয়েছে। আর কতদিন জেলে থাকতে হবে তাঁকে? জবাবে বিচারক জানান, তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দিষ্ট করে সময় বলে দিতে পারে না আদালত। 


এ দিন শুনানি চলাকালীন মানিক ভট্টাচার্যও ইডি-র বিরুদ্ধে সরব হন। বলেন, "আমি যেদিন গ্রেফতার হই, তদন্তকারী সংস্থা একটি চিঠি নিয়ে এসেছিল। এই চিঠিতে যে জনৈক চাকরি প্রার্থীর নাম উল্লেখ রয়েছে, তাঁর চিঠি অ্যাড্রেস করা ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। তাহলে কী করে এই চিঠির ভিত্তিতে আমাকে হেফাজতে নেওয়া হল? চন্দন মণ্ডল বা অন্যরা চাকরি দিয়ে থাকলে আমি কী করব? এতদিন আইন পড়েছি। কিন্তু, ইডি হেফাজতে আসার পর থেকে আমি আইন ভুলতেই বসেছি।" মানিক আরও বলেন, "স্যর হয় আমাকে ছেড়ে দিন, না হলে এমন একটা অর্ডার দিন যাতে আজ রাতে ঘুমোলে কাল সকালে যেন আমার চোখ না খোলে।"

এ দিন, ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়-অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের জেল হেফাজত ও ২১ মার্চ পর্যন্ত মানিক ভট্টাচার্যর জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।