শিবাশিস মৌলিক ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা: রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও থেমে থাকল না রাজনীতি (Rabindra Jayanti)। মঙ্গলবার সকালে, ধনধান্য়ের অনুষ্ঠান থেকে, নাম না করে বিজেপি (BJP) নেতাদের কটাক্ষ করেছিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। সন্ধেয় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামের অনুষ্ঠানে, অমিত শাহর (Amit Shah) উপস্থিতিতে, নাম না করে তৃণমূলনেত্রীকে (TMC) নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। এ নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।


বীরভূমে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ এবং তাঁর ছেলে জয় শাহকে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় তীব্র আক্রমণ করলেও, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে রবি-স্মরণ অনুষ্ঠানে সরাসরি কিংবা পরোক্ষে সেই নিয়ে কোনও কথাই বলেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ওই অনুষ্ঠানেই শাহের উপস্থিতিতে নাম না করে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে তীব্র কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee:'না জেনে বলা যায় শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান', নাম না করে কি শাহকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর?


মঙ্গলবার সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠান থেকে শুভেন্দু বলেন, "বাঙালির ভয় কাটাতে হবে। 'কথাঞ্জলি' কখনও 'গীতাঞ্জলী'র বিকল্প হতে পারে না। অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে হবে বাংলার সমাজকে। এপাং ওপাং ঝপাং! অমিত শাহকে বলব, আমাদের দিশা দেখান।"
বাইট - শুভেন্দু অধিকারী, বিরোধী দলনেতা


সেই কত যুগ আগে, কবিগুরু লিখেছিলেন-


'ঐ মহামানব আসে

দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে

মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে।'

মঙ্গলবার রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে কবি-স্মরণে সেই মহামানব উপমাই টানলেন শাহ। কবিগুরুকে তিনি 'বিশ্বমানব', 'মহামানব' বলে উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার শাহের বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ এবং মহাত্মা গান্ধীর সম্পর্কের প্রসঙ্গও। নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, ১৯২০ সালে গান্ধীজির সবরমতী আশ্রমে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, মহাত্মাজির বাণী বিশ্বের সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। অতএব মহাত্মাকে বিশ্বকর্মা বলাই যেতে পারে।

আবার রবীন্দ্রনাথের লেখা 'জীবন যখন শুকায়ে যায়/করুণাধারায় এসো/সকল মাধুরী লুকায়ে যায়/গীতসুধারসে এসো' অত্যন্ত প্রিয় ছিল গান্ধীজির। এর বাইরেও, মঙ্গলবার শাহের মুখে উঠে এল রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন তিনি।


আরও পড়ুন: Skin Care With Coffee: স্ক্রাব হোক বা মাস্ক, ত্বকের যত্নে ঠিক কীভাবে ব্যবহার করবেন কফি?

তবে বর্তমানে দেশের নানা প্রান্তে যে উগ্র জাতীয়বাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেই ধরণের উগ্র জাতীয়বাদের বরাবরই বিরোধী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 
জাপান যাওয়ার আগের বছর, ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথের একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল: 'ঘরে বাইরে'। সেখানে নিখিলেশ এক জায়গায় বলেছিল,
‘দেশকে সাদা ভাবে দেশ বলে জেনে যারা তার সেবা করতে উৎসাহ পায় না, চিৎকার করে মা মা বলে, দেবী বলে মন্ত্র পড়ে, তাদের সেই ভালবাসা দেশের প্রতি তেমন নয়, যতটা নেশার প্রতি’। রবীন্দ্রনাথের এই দর্শন কি রাজনীতিবিদরা মেনে চলেন? এটা কি মনে করার সময় ফের এসে গেছে দেশবাসীর?