কৌশিক গাঁতাইত, তুহিন অধিকারী, কলকাতা: বাজারে জিনিসপত্রের দাম আগুন। রোজকার হেঁশেলে যে আলু না হলে চলে না, সেই আলুও অগ্নিমূল্য। আলুর দাম কমানোর জন্য ইতিমধ্যেই কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহর থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে টাস্ক ফোর্সও। কিন্তু তার পরও শাক-সবজির দাম তেমন কমেনি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে আলুর ঘাটতি দেখা দেবে কি না, আলুর দাম আরও চড়বে কি না, সেই নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর সেই পরিস্থিতিতেই কর্মবিরতির ডাক দিল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। (Pragatishil Alu Byabsayee Samiti )
অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিল প্রগতিশীল আলু ব্য়বসায়ী সমিতি। অগ্নিমূল্য বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমাতে সম্প্রতি টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্য়মন্ত্রী। সেই বৈঠক থেকেই আলুর দাম কমাতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "বড় ব্যবসায়ীরা কোল্ট স্টোরেজে আলু আটকে রাখেন অনেক ক্ষেত্রে। মাসে ৬ লক্ষ মতো আলু লাগে, ছ'মাসে লাগে ৩৬ লক্ষ। আলু বের করুন। এই রাজ্যের বাইরে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না, দেখতে হবে। চেক করতে হবে সীমানায়। গতবারও নতুন আলু আসার পরও পুরনো আলু কোল্ট স্টোরেজে ছিল। কেন থাকবে? এতে আলু খারাপও হয়ে যায়। কোনও অজুহাত চলবে না। আলুর দাম কমাতে হবে।"(Potato Prices Surge)
মমতার এই নির্দেশের পরই আলু বোঝাই করা গাড়ি প্রশাসনের তরফে রাজ্যের সীমানায় আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে আলু ব্য়বসায়ীদের একাংশের দাবি। শনিবার বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুর ডি চেক পোষ্টে আটকে দেওয়া হয় আলু বোঝাই একাধিক লরি। পুলিশকে বলতে শোনা যায়, "আমরা বলেছি, আলু আমাদের। নির্দেশ আছে, বাইরে যাবে না। আপনারা গাড়ি ঘুরিয়ে নিন।"
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'কেউ নেতা নন, সবাই সহকর্মী', দলের উদ্দেশে মমতা, ২১ জুলাই অখিলেশকে এনে কাকে বার্তা?
লরির চালক ফিরোজ মল্লিকের উদ্দেশে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, "এখান দিয়ে ঝাড়খণ্ডে যেতে দেব না। বলবেন না যে পুলিশ কাগজপত্র নিয়ে রেথেছে। আমরা দেখেছি, আলু লোড করা আছে। সীমানা থেকে ঘুরিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে যেতে বলছি। ওদিকে (রাজ্যের দিকো) যান আপনারা, এদিকে (সীমানা পেরিয়ে) যাওয়া যাবে না।"
ফিরোজ জানান, গিরিডি যাচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ আটকে দিয়েছে। অন্তত ৩০টি গাড়ি সীমানায় আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এর পরই
আলু বোঝাই করা লরি আটকানোর প্রতিবাদে শনিবার বাঁকুড়া জেলার জয়পুরে বৈঠক করে প্রগতিশীল আলু ব্য়বসায়ী সমিতি। অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
প্রগতিশীল আলু ব্য়বসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্য়ায় বলেন, "অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি আমরা। আলুর দাম কমানোর জন্য আটকে দিচ্ছে। আমরা তো নিয়ন্ত্রণ করি না! কোনও রকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সীমানায় গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। বাইরে আলু রফতানি না করতে পারলে রাজ্যে কীভাবে বিক্রি করব? রাজ্যে অ্যাভারেজ আলু বিক্রি হয় না।"
প্রগতিশীল আলু ব্য়বসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বিভাস দে বলেন, "সরকারের খবর গিয়েছে যে, ভিন রাজ্যে গিয়ে এ রাজ্যে কম আলু থাকছে। আমাদের না জানিয়ে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। সাধারণ মানুষেক অসুবিধা হবে জেনেও তাই কর্নবিরতির ডাক দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই।"
কিন্তু আলু ব্য়বসায়ী সমিতির এই কর্মবিরতির ডাকে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। কারণ, এর ফলে বাজারে আলুর জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
বাড়তে পারে আলুর দাম। এতে টান পড়বে মধ্যবিত্তের পকেটেই।