রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: পঞ্চায়েত অফিসে কাজের জন্য তড়িঘড়ি করে বেরিয়েছিলেন এক গ্রামবাসী। রাস্তায় এসেই চোখে পড়ল একটি টোটো। সেটায় উঠে তড়িঘড়ি নির্দেশ দিলেন টোটোচালককে, তাড়াহুড়ো করে টোটো চালাতে বলতেই চালকের জবাব, 'তাড়া নেই, প্রধান এখনও পৌঁছননি অফিসে।' তা শুনেই যাত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'আপনি কীভাবে জানলেন? দেরি হয়ে গিয়েছে।' তারপরেই ওই ব্যক্তির চোখ যায় চালকের দিকে। ভাল করে দেখতেই হেসে ফেললেন যাত্রী। কারণ যার সঙ্গে তাঁর দেখা করার জন্য এত তাড়াহুড়ো, তিনি চালাচ্ছেন সেই টোটো।


অনেকটা সিনেমার মতো লাগলেও আদৌ সিনেমা নয়। বাংলার এক গ্রামেই বাস্তব ঘটনা এটি। ওই টোটো চালক আসলে কেতুগ্রাম (Ketugram) দু নম্বর ব্লকের তৃণমূল (TMC) পরিচালিত গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েতের প্রধান গোপাল হাজরা। পঞ্চায়েত প্রধান তাঁর পরিচয়, তারই সঙ্গে তাঁর পেশা টোটো চালানোই। সংসার চলে সেই রোজগারেই। 


দিনভর ব্যস্ততা:
ভোর হলেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গোপাল হাজরা। বেশ কিছুটা রোজগার করে সকাল ১০টার আগেই বাড়ি ফেরেন তিনি। তারপর স্নান-খাওয়া সেরে পঞ্চায়েত অফিসে। কারণ পঞ্চায়েত অফিসেও যে রয়েছে ঢের কাজ। প্রধান হিসাবে অফিসের কাজ সেরে আবার বিকেল থেকে রাত্রি পর্যন্ত টোটোচালকের ভূমিকায় ফিরে যান গোপাল। পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাওয়ার সময়ও তাঁর ভরসা টোটো। সেই টোটো চালিয়েই পৌঁছে যান সেখানে।


পঞ্চায়েত প্রধান (Panchayat Pradhan) হওয়ার আগে থেকেই এলাকায় টোটোচালক হিসেবেই পরিচয় গোপাল হাজরার। টোটো চালিয়েই তিনি সংসার চালাতেন। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে দল তাঁকে প্রার্থী করে, জিতেও যান। গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েতের প্রধান করে দল। তাঁর পরেও পেশা ছাড়েননি তিনি। কেন? তিনি বলছেন, 'পাঁচ বছর পরে যদি প্রধান না থাকি, তখন তো টোটো চালিয়েই খেতে হবে।' পাশাপাশি পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে যে ভাতা তিনি পান তাতে টোটো না চালালে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে বলেই মনে করেন তিনি। 


আরও পড়ুন: জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ল প্ল্যাটফর্মে, মৃত্যু, জখম একাধিক