কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : বর্ধমান মহারাজের প্রতিষ্ঠিত দেবী সর্বমঙ্গলার ঘট উত্তোলনের মাধ্যমে রাঢ় বঙ্গের শারদীয়া উৎসবের (Durga Puja 2021) সূচনা হল। রাজ আমলের প্রথা মেনেই বৃহস্পতিবার বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট উত্তোলন হয়। আর এই ঘট উত্তোলন ও প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই বর্ধমানে আনিষ্ঠানিকভাবে শারদ উৎসবের সূচনা হল। 


১৭০২ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়ে চুনুরিদের কাছে থাকা বাঁকা নদের পার থেকে উদ্ধার করে দেবী সর্বমঙ্গলাকে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ রাজবাড়ির মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা সর্বমঙ্গলা। মন্দিরের প্রবেশ পথে তিনটি স্তরে পোড়া মাটির মূর্তি রয়েছে। মূল মন্দিরের সামনে রয়েছে নাট মন্দির। দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকলে দেখা যায় দু ধারে দুটো শিব মন্দির। প্রতিবছর চিরাচরিত প্রথা মেনে মহালয়ার পরে প্রতিপদে দেবীর ঘট তোলা হয়। এবছরও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না। মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদে রুপোর ঘটে কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরে ঘোড়ার গাড়িতে করে সেই ঘট নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। জল নিয়ে যাওয়ার সময় বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রাও হয় প্রতিবছর। চলতি বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে ভক্তসমাগমের মধ্যে হল সেই শোভাযাত্রা। 


যাবতীয় কোভিড বিধি মেনে শোভাযাত্রা করে, ঢাক বাজিয়ে, ব্যান্ড বাজিয়ে এক্কাগাড়িতে করে কৃষ্ণসায়র থেকে রুপোর ঘটে করে জল নিয়ে এসে দেবী সর্বমঙ্গলার ঘট প্রতিষ্ঠা হল এদিন। আগামী ৯ দিন ধরে চলবে মায়ের পুজো। তার সঙ্গে চলবে চন্ডীপাঠ। বছরের প্রতিদিনই নিয়ম মেনে দেবীর পুজো হয়। কষ্টিপাথরের সিংহবাহিনী দেবী সর্বমঙ্গলাকে প্রতিদিন ভোগ নিবেদন করা হয়। রুপোর সিংহাসনে মা আসীন। জানা যায়, আগে সন্ধিপুজোয় কামান দাগা হত। তার সঙ্গে মেষ, মহিষ ও ছাগ বলি দেওয়া হল। কিন্তু এখন বলি দেওয়ার রীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেসময়ে বর্ধমানের রাজবাড়িতে সন্ধিপুজোর কামানের আওয়াজ শুনে আশেপাশের সমস্ত জমিদার বাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হত। নবমীতে এখানে হয় নব কুমারী পুজো। প্রতিবছরের মতো এবছরও সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজোকে ঘিরে আনন্দে মাতেন বর্ধমানের বাসিন্দারা। সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগে রয়েছে। মহিলারা সকাল থেকেই নতুন পোশাকে হাজির হয়ে পড়েছেন মন্দিরে।