কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন রীতি মেনে আজও এখানে নহবত বসে, ঠাকুরদালানে ঝলমল করে ঝাড়লণ্ঠনের আলো। কালিকাপুরাণ মেনে দেবীর (Durga Puja 2023) আরাধনা হয় মেমারির আমাদপুর (Memari Amadpur) জমিদার বাড়িতে। ৩৬৩ বছর প্রাচীন ধারা আজও ধরে রেখেছেন উত্তরসূরিরা। তাই তো এখানে লক্ষ্মী ও সরস্বতী প্রতিমার কোনও বাহন থাকে না আজও।


অনন্য সে সাজ..
একেবারে নিয়ম মেনে রথের দিন রাধামাধবের রথের চাকার মাটি দিয়ে দেবীমূর্তিতে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। সে দিন থেকেই দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু মেমারির আমাদপুরের জমিদার বাড়িতে। তার পর, দুর্গাপুজোর ঠিক ১৪ দিন আগে, কৃষ্ণানবমী তিথিতে মহিষাসুরমর্দিনীর বোধন হয়। সে দিন থেকে প্রতি দিন চলে চণ্ডীপাঠ। এখানে তাই দুর্গোৎসবের মেয়াদ ১৯ দিন। বাড়ির সব সদস্য একসঙ্গে মেতে ওঠেন পুজোর আনন্দে। পরিবারের লোকজনের বিশ্বাস, বাহন থাকলে অন্যত্র চলে যেতে পারেন দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী। তাই তাঁদের প্রতিমার সঙ্গে কোনও বাহন থাকে না এখানে। দেবীর নৈবেদ্য ভোগেও থাকে চমক। ১ মণ চালের মহানৈবেদ্য দেওয়া হয় দুর্গাপ্রতিমার সামনে। ফল ও কাঁচা সব্জিও থাকে তাতে। ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় লুচি, মোহনভোগ, ক্ষীর, ছানা, নারকেল নাড়ু, রসকরা। এখানে অন্নভোগ হয় না। গোটা ফল এবং সুন্দর করে সাজিয়ে আতপ চাল দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়াই রীতি।


আর যা...
সাধারণত ষষ্ঠীর দিন নিরামিষ খাওয়ার প্রচলন থাকলেও জমিদার বাড়িতে একেবারেই উল্টো প্রথা। বরং মাছের ল্যাজা খেয়ে দেবীবরণ করতে যান বাড়ির মহিলারা। প্রতি দিন পুজোর পরে ছোট-বড় সকলে মিলে নাটক,নাচ,গান, আবৃত্তির আসর তো রয়েছেই। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ও প্রাচীন রীতি মেনে চলেন এখানকার জমিদার পরিবারের সদস্যরা। আজও মশাল জ্বালানো হয় সেদিন। বাশের সাং বেঁধে কাঁধে করে প্রতিমা গোটা গ্রামে ঘোরানো হয়। তারপর নিরঞ্জন।


কী ভাবে শুরু?
আজ থেকে প্রায় ৩৬৩ বছর আগে শুরু হয় পূর্ব বর্ধমানের আমাদপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। বর্ধমান থেকে ৩০ কিলোমিটার ও  হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনে মেমারি স্টেশন থেকে ৫ কিমি দূরে এই আমাদপুর জমিদার বাড়ির কথা লোকমুখে অনেকেই জানেন। আজ জমিদারি না থাকলেও আভিজাত্যে বিন্দুমাত্র টান পড়েনি। শোন যায়, রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন এই পরিবারের সদস্য দোহী সেনশর্মা। তিনি আবার কবি জয়দেবের সহকর্মীও ছিলেন। পরবর্তী কালে মুঘলদের কাছ থেকে এই পরিবারের দুই ভাইয়ের একজন মজুমদার ও অন্য জন চৌধুরী উপাধিও পান। মুর্শিদাবাদ থেকে আসার সময়ে কুলদেবতা রাধামাধবকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণ রাম সেনশর্মা। জমিদারবাড়ি তৈরির পাশাপাশি মন্দির তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করেন রাধামাধবকেও। রাধামাধব মন্দিরের বিপরীতে তৈরী হয় দুর্গাদালান। একই সঙ্গে শুরু হয় দুর্গাপুজোও। তখন পুজো হত রাধামাধবের মন্দিরের বিপরীতে তৈরী দুর্গাদালানে। পরে নতুন করে দুর্গাদালান তৈরী করে পুজো শুরু হয়। সেই দালানেই এখন সেজে ওঠেন মহিষাসুরমর্দিনী। 


 


আরও পড়ুন:সন্ধ্যার অন্ধকারে রাস্তা পার হচ্ছে বিশাল পাইথন, আতঙ্কে দাঁতনের বাসিন্দারা