কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: ১২১ জোড়া পাত্রপাত্রী একই ছাদের তলায়,একই সঙ্গে সানাই ও আজানের মেলবন্ধনে চারহাত এক করে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।উদ্যোক্তাদের দাবি, সর্বধর্ম সমন্বয়ে এটাই হয়ত পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় গণবিবাহ। কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দির কমিটির উদ্যোগে মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুক্রবার রাতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ১২১ জোড়া পাত্রপাত্রী।


গণবিবাহে ১২১ জোড়া পাত্র-পাত্রী


বৃহৎ গণবিবাহ মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। বর্ধমান পৌরসভার  কাউন্সিলর থাকাকালীন তিনি কঙ্কালেশ্বরী কালীবাড়ি গণবিবাহ কমিটির মাধ্যমে এই গণবিবাহ শুরু করেন।যা এবছর ১০ বর্ষে পদার্পণ করলো।১২১ জোড়া পাত্রপাত্রীর মধ্যে ১৪ জোড়া মুসলিম,২জোড়া খ্রিস্টান ও বাকিরা সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী।  প্রত্যেক ধর্মের রীতি ও রেওয়াজ মেনেই সম্পন্ন বিবাহ।


গণবিবাহের আসরে  উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব


এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সাক্ষী হিসাবে এদিনের গণবিবাহের আসরে  উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়,মলয় ঘটক, চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়,স্বপন দেবনাথ,পার্থ ভৌমিক,বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,শম্পা ধাড়া,সাংসদ অসিত মাল,সুনীল মন্ডল প্রমুরা।উপস্থিত ছিলেন পুরোহিত ও কাজীরা ও বিভিন্ন আশ্রমের মঠাধ্যক্ষরা। 


সোনার গয়না-TV উপহার, ভবিষ্যতের কথা ভেবে জীবনবীমাও


তবে নামে গণবিবাহ হলেও আয়োজনে কোনও ত্রুটি ছিল না। আয়োজকরা বিবাহের সমস্ত খরচ বহন করার পাশাপাশি প্রতিজোড়া পাত্রপাত্রীকে দেওয়া হয়েছে সোনার আংটি আর নাকছাবি। দেওয়া হয়েছে কালার টিভি, বিছানা, সাইকেল, সেলাই মেশিন থেকে আরও অনেক দানসামগ্রী।দেওয়া হয়েছে চাল, আলু, আটা থেকে একমাসের মত রেশন। এছাড়াও ছেলেপক্ষ আর কনেপক্ষের  ৫০ জন আত্মীয়ের ভুরিভোজের ব্যবস্থাও ছিল।আগামী ভবিষ্যতের কথা ভেবে করে দেওয়া হয় লাইফ ইন্সুরেন্স।


সাধ থাকলেও সাধ্যে জোগাড় ছিল না


গণবিবাহের আসরে দেখা মেলে রমেন মণ্ডল ও প্রিয়াঙ্কা সরকার নামে এক নবদম্পতির।তারা জানান,ক্যানিং থেকে তারা এখানে এসেছেন।দু-জনেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে এই গণবিবাহর কথা জানতে পেরে দুই পরিবার যোগাযোগ করেন গণবিবাহ কমিটির সঙ্গে।তারপরই আজ  বিবাহ সম্পন্ন হয়।সাধ থাকলেও সাধ্যে জোগাড় ছিল না।আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পাত্রীদের জন্য গণবিবাহ এই অনুষ্ঠান সত্যিই আমাদের মতো বহু মানুষেরই সখ পূরণের একটা বড় জায়গা।


আরও পড়ুন, 'আমার ছেলে নির্দোষ, কোচিংয়ে পড়ায়..', দাবি সংসদকাণ্ডে ধৃত ললিতের মা-বাবার


গণবিবাহ আজ দেশজুড়ে সমাদৃত


তবে শুধু ক্যানিংই  নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলা এমনকি ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ড, দিল্লি ও রাজস্থান থেকেও পাত্রপাত্রীরা এসেছেন এই গণবিবাহের আসরে।গণবিবাহের অন্যতম আয়োজক বিধায়ক খোকন দাস জানান, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পরা মানুষগুলো যারা চান ছেলে বা মেয়ের এই শুভদিনে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে একটু আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে একটু আনন্দ করতে তাদের সেই আশায় পূরণ করি আমরা।১০ বছর আগে শুরু হওয়া এই গণবিবাহ আজ দেশজুড়ে সমাদৃত।দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণে গণবিবাহের এই আসর কার্যত  উৎসবে পরিণত হয়েছে।