রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: কাটোয়াকাণ্ডে কড়া প্রতিক্রিয়া রাহুল, সুজনের। উল্লেখ্য, সুদের টাকা দিতে না পারার অভিযোগে রেল লাইনে বেঁধে পা কেটে নেওয়ার হুমকি। এবার সুদ কারবারিদের হুমকির ভয়ে এক স্কুলশিক্ষক (School Master) আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।  জোর করে বাড়ি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষকের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ সুদ-কারবারিদের বিরুদ্ধে। এরপরই স্বামীকে বাঁচাতে কাটোয়া থানার দারস্থ হন স্ত্রী। ইতিমধ্য়েই চারজনকে গ্রেফতার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ (Katwa Police)।  ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই মুখ খুললেন  বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা এবং সিপিএম-র বর্ষীয়ান নেতা সুজন চক্রবর্তী।


'দুষ্কৃতিরা মনে করবে, আমাদের সরকার, আমাদের শাসন'


বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, 'এতো আমরা বিভিন্ন উপন্যাসে শুনতাম। এখন দেখছি সেই পুরনো যুগই আবার ফিরে এসেছে।.. এতো, দিনে-দুপুরে ডাকাতির মতো অবস্থা।' পাশাপাশি, বামনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'প্রশাসন বলে কিছু থাকছে না। শুধু সুদের ব্যবসায়ী লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।এরাই কিন্তু এখন চালাচ্ছে সমাজ।..দুষ্কৃতিরা মনে করবে, আমাদের সরকার, আমাদের শাসন। আমরা যা কিছু করতে পারি।' প্রসঙ্গত, কেতুগ্রামের পর এবার কাটোয়া। শিউরে ওঠা ঘটনাই মনে করাল সুদ কারবারিরা। মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ। রাতেই তড়িঘড়ি প্রেস কনফারেন্স করে কাটোয়া থানার এসডিপিও জানান, যে এটি একটি বড় চক্র। এই চক্রের সঙ্গে পা কেটে নেওয়ার ঘটনা যুক্ত আছে নাকি সেটাও পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করতে বেরিয়েছিলেন ওই স্কুলশিক্ষক। সুইসাইড নোটে তিনি লেখেন, 'আমার মৃত্যুর পরে যে টাকা পাবে, সেখান থেকে টাকা মিটিয়ে দিও। ছেলের খেয়াল রেখো আমায় ক্ষমা কর। পুলিশের কাছে অনুরোধ এই সুদ কারবারীদের ব্যবসা বন্ধ করুন।' ছোট ছেলে সেই চিঠি দেখতে পেয়ে মাকে জানায়। মা সুসাইড নোট নিয়ে হাজির হন পুলিশের কাছে। এরপরই পুলিশ তার স্বামীকে উদ্ধার করে। আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বেরিয়ে আসে সুদ কারবারীদের চক্রের কথা।


আরও পড়ুন, জুট মিল, কারখানাগুলি থেকেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি! দাবি ভাটপাড়া পুরসভার


 বাবার  চিকিৎসার জন্য পরিচিত বুড়ো প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক অনিমেষ সরকার। ২০১৯ সালের ঋণ নেওয়া পাঁচ লাখ শোধ করতে গিয়ে চড়া সুদের চক্রে পড়ে। ৩০ লক্ষ টাকা শোধ করার পরেও এখন সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। চড়া সুদের কারবারিদের চক্রে ফেঁসে অনিমেষবাবুর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও পথ নেই বলে  পুলিশকে লিখিত ভাবে জানায়। চড়া সুদের কারবারিরা লাগাতার হুমকি দিতে থাকে টাকা শোধ না করলে তার পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এমনকি অনিমেষবাবুর স্ত্রী ও বাচ্চাকে প্রাণে মারার  হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির মুখে গোটা পরিবার দিশেহারা অবস্থায় পড়ে কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হয়। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, এই চক্রে যে একবার টাকা ধার করবে, তার অবস্থা শোচনীয় হবে। যত দিন যায় আসল টাকার সঙ্গে চক্রবৃদ্ধিহারে, সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দু-তিন বছরের মধ্যে আসল-সুদ মিলিয়ে বিশাল পরিমাণ টাকা তাকে  পরিশোধ করতে হয়। টাকা  পরিশোধ করতে না পারলেই ভিটে-মাটি লিখে নেওয়া হয়। এই বিশাল চক্রের সন্ধানের তদন্তে নেমেছে কাটোয়া থানার পুলিশ।