কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : মৃত্যুর পর গঙ্গায় নয়, মা কালীর চরণতলে থাকতে চেয়েছিলেন সাধক কমলাকান্ত। জনশ্রুতি আছে, মৃত্যুর দিনে মা গঙ্গা নিজেই এসেছিলেন সাধকের কাছে।


বর্ধমানের বোরহাটের কমলাকান্ত কালীবাড়ি। এখানেই তিনি তাঁর সাধনা শুরু করেছিলেন। সাধক কমলাকান্তকে নিয়ে আরও অনেক লোকগাথা মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। শোনা যায়, সাধক কমলাকান্তের কালনায় জন্ম হলেও তিনি তাঁর মামারবাড়ি গলসির চান্না গ্রামে থাকতেন। সেখানেই তিনি তাঁর সাধনা শুরু করেছিলেন এবং রাজপরিবারের সান্নিধ্যে আসেন। তখন বর্ধমানের রাজা ছিলেন তেজচাঁদ। প্রথমে তেজচাঁদ তাঁকে সাধক হিসাবে মানতে চাননি। কথিত আছে, রাজা তাঁকে বলেছিলেন, অমাবস্যার দিন যদি তিনি তাঁকে চাঁদ দেখাতে পারেন তবেই তিনি সাধক বলে মানবেন। ঘোর অমানিশায় বর্ধমানের আকাশে মহারাজকে পূর্ণিমার চাঁদ দর্শন করিয়েছিলেন এই সাধক।


সেই থেকেই তেজচাঁদ কমলাকান্তকে গুরু হিসাবে মানতেন। কমলাকান্তর সাধনক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত বর্ধমানের বোরহাট। এই মন্দিরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কালীসাধক কমলাকান্ত। 


মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কমলাকান্ত। তাঁর ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর মায়ের চরণতলে তাঁকে ঠাঁই দেওয়া হয় যেন। মায়ের থেকে তাঁকে যেন কোনওভাবেই আলাদা না করা হয়। সেই ইচ্ছানুসারে, তাঁর সমাধির উপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় মায়ের মূর্তি ও মন্দির। কমলাকান্তের কালী ধাতুর তৈরি।


২১৩ বছর ধরে এখানে পুজো হচ্ছে। প্রত্যেক অমাবস্যায় বৈদিক মতে পুজো হলেও, কার্তিক মাসের অমাবস্যায় তন্ত্র মতে পুজো হয়। আগে ছাগ বলি হত। বর্তমানে ছাগ বলি হয় না। ছাঁচি কুমড়ো বলি হয়। মায়ের ভোগের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। 


সাধক কমলাকান্ত কালী মাকে মাগুর মাছের ভোগ খাওয়াতেন। সেই রীতি মেনে আজও মাকে কালীপুজোয় মাগুর মাছের ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতি আমাবস্যাতেও মাকে মাগুর মাছের ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। এছাড়াও ১৩ রকমের ভাজা, পায়েস, ফ্রায়েড রাইস, লুচি, সুজি ও মিষ্টি থাকে।


মন্দিরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২১৬ বঙ্গাব্দে সাধক কমলাকান্ত এখানে মায়ের পুজোর প্রচলন করেছিলেন। সেই হিসাবে বর্তমানে অর্থাত ১৪২৮ বঙ্গাব্দে মায়ের ২১৩ তম বর্ষের পুজো হচ্ছে। প্রতি বছর প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে মায়ের মন্দিরে। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। কালীপুজোর দিন রাতভর দেবীর আরাধনা হয়। পরদিন অন্নকূট। তৃতীয় দিনে মন্দির প্রাঙ্গনে সাধক কমলাকান্ত দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। যদিও করোনা অতিমারীতে ভোগ বিতরণ ও কমলাকান্ত দিবস পালন হবে না।